করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেক চলমান বিধিনিষেধ খুব তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে সরকারগুলোকে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, যেসব দেশ এ ঝুঁকি নিয়েছে, তাড়াহুড়ো করে স্বাভাবিকতায় ফিরে যাওয়ায় তাদের অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর জরুরি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান বলেন, করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ কাছেই চলে আসছে। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে মহামারি কেবল শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মহামারি শেষ হয়ে যায়নি। আমেরিকার দেশগুলোলোতে সপ্তাহে ১০ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। ইউরোপের অবস্থাও ভালো না, সেখানে সপ্তাহে পাঁচ লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। এটি এমন কিছু না, যা চলে গেছে।
গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার পরিচালক ডা. মাশিডিসো মোইতি হুঁশিয়ারি দেন, মহাদেশটিতে মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের মাত্রা ও গতি—আমরা আগে যেগুলো দেখেছি, তার কোনোটির মতোই হবে না। এখন প্রতি তিন সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে যেটা চার সপ্তাহে হতো।
রাশিয়ায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরেকটি দৈনিক রেকর্ড ভেঙেছে মঙ্গলবার। দেশটিতে এদিন ৭৩৭ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। আর গত মাসের চেয়ে সংক্রমণ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। জুনের শুরুতে যেটি ৯ হাজার ছিল, চলতি সপ্তাহে তা ২৩ হাজার।
এছাড়া করোনার ডেল্টা ধরন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত এপ্রিলে এ ধরন প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত এ অতিসংক্রামক ধরন প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়েছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে একটি দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে করোনার টিকা দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নত টিকাদান কর্মসূচির দেশগুলোর জন্যও যা অনেক কঠিন একটি কাজ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তখন আগামী দুসপ্তাহের মধ্যে করোনার অধিকাংশ বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সোমবার তিনি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যখন গ্রীষ্ম ও স্কুল ছুটি আসবে, তখন সমাজকে যদি বিধিনিষেধ থেকে বের করে নিয়ে না আসি, তবে আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, কখন আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব।
এতে আরও সংক্রমণ বাড়বে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের ভাইরাসের সঙ্গে বাস করতে শিখতে হবে।
ডেলটা ধরনের প্রাদুর্ভাব ও কেবল গত সপ্তাহেই ৭৫ শতাংশ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৯ জুলাই করোনা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
সংস্থাটির প্রধান চাঁদ নাগপাল বলেন, সচেতনভাবে নির্ধারিত করোনা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা উচিত সরকারের। মানুষের জীবন সুরক্ষায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে উপাত্তের ওপর নির্ভর করে, তারিখের ওপর ভিত্তি করে না।
তবে ইউরোপীয় দেশ জার্মানি বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। ভারত, নেপাল, পর্তুগাল, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ওপর কোয়ারেন্টিন বিধিও শিথিল করে দিয়েছে তারা।