দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের চলমান কাজ এখন যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। বুধবার (৭ জুলাই) বেলা ১২ টায় বিমানবন্দরে বিআরটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমন দাবি করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল।
প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ফেলে রাখায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা আর সমন্বয়হীনতার কারণেই ভোগান্তি বেড়েছে এই সড়কে চলাচলকারীদের। এসময় তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করছে বিআরটি প্রকল্প। তাদের এই প্রকল্প কাজ করতে কতদিন সময় লাগবে সেটাও তারা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। এই পর্যন্ত তাদের কোন প্রকার নকশাও আমাদেরকে দিতে পারেনি। তারা তাদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করছে।
যানজট নিরসনে প্রকল্পটি কোন ব্যবস্থা নেয় বলেও দাবি মেয়রের। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকে। প্রকল্পেটির অব্যবস্থাপনার কারণে গাজীপুর ও ঢাকা দুটি শহরেই মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সড়কটি খারাপের কারণে বর্ষায় আরো ধকল বাড়তে পারে বলে জানান মেয়র। সেটা বিবেচনায় নিয়ে আগে থেকেই সড়ক সংস্কার করে কাজ করা দরকার ছিল। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা কাজটি করেনি।
এর মধ্যে সড়কের মাঝ বরাবর বিআরটি প্রকল্পের পিলার বসানো হয়েছে। এতে সড়কটি সরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি সড়কের মান খুবই খারাপ। কাজের শুরু থেকে সড়কে কোন প্রকার সংস্কার করা হচ্ছে না। প্রকল্প চলাকালীন এসব সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব প্রকল্পের ঠিকাদারদের, এজন্য তাদের রয়েছে বরাদ্দও। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের আগে সে কাজটি হয়নি বলে ক্ষোভ ঝাড়েন মেয়র।
২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের আওতায় দেশের প্রথম বিআরটি প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা ব্যয়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষ করার কথা হয়। কিন্তু সেটিও পরবর্তীতে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং সময় ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে।
সে হিসেবে বিআরটি প্রকল্প শেষ হতে আর মাত্র এক বছর সময় রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কাজের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ৬-৭ বছর ধরে গাজীপুরবাসীর গলার কাঁটা হয়েছে এই প্রকল্প। সারা বছরই গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজট লেগেই আছে। অপরিকল্পিতভাবে যেখানে খুশি গর্ত ও ভাঙাচোরা করছে। তাদের প্রকল্পের কারণেই প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা ও গাজীপুর এলাকার যানজট নিরসনে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর এক সভায় অনুমোদন পায় ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট)। বিগত প্রায় ৯ বছরে দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদ ও সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার সংশোধিত সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে।