প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে তিনটি উপায়ের কথা বলে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। টিকা, স্বাস্থ্যবিধি মানা আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন-এই তিন কৌশল একই সঙ্গে প্রয়োগের কথাই বলেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু বাংলাদেশে এগুলোর সব কটিই চলছে ছন্নছাড়া অবস্থায়। না মিলছে প্রত্যাশিত পরিমাণে টিকা, মানুষ না মানছে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি আর না কার্যকর করা যাচ্ছে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এর পরিণতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখন দেশে বেপরোয়া।
বেপরোয়া এই সংক্রমণ ঠেকাতে পবিত্র ঈদুল আজহার পর দুই সপ্তাহের প্রি-শাটডাউনে (২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট) যাচ্ছে বাংলাদেশে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ঈদের পরের বিধিনিষেধ হবে কঠোর থেকে কঠোরতর। সরকার কখনো লকডাউন, কখনো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু কোনোটাতেই কাজ হয়নি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রি-শাটডাউনে (কঠোর থেকে কঠোরতর) যাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যারিয়েন্ট নয় স্বাস্থ্যবিধি অবহেলার কারণেই দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হার। সংক্রমণের বিষয়কে আমরা যেভাবেই দেখি না কেন, বাস্তব অবস্থা এখন খুবই খারাপ। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধে মানুষকে গৃহবন্দি করে রাখার বিকল্প নেই। ঈদুল আজহা সামনে রেখে পহেলা জুলাই থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। আর শিথিল হয় ১৪ জুলাই মধ্য রাতে। এ বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত। তবে ঈদ ছুটির পরদিন থেকেই ১৪ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা দেয় সরকার। যা শুরু হবে ২৩ জুলাই সকাল ৬টায়, চলবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। এ অবস্থায় লকডাউন শিথিল করায় ১৫ জুলাই থেকেই চালু হয় গণপরিবহন, খুলে দেওয়া হয় শপিংমলসহ সব ধরনের দোকানপাট।
এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ জাতীয় কারিগরি কমিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, ঈদকেন্দ্রিক অবাধ চলাফেরায় সামনে অবস্থা আরো ভয়াবহ হতে পারে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে সংক্রামণ থেকে রক্ষা পেতে ঈদ পরববর্তী অন্তত ১৪দিন সবকিছু বন্ধ থাকা দরকার। এতে জরুরি ওষুধ এবং খাদ্য সরবরাহ ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে। মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। তা না হলে আমরা এখন যে জীবিকার কথা বলছি, খাদ্যের কথা বলছি, তার জন্য লোক থাকবে না। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে।
জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ঈদ পরবর্তী বিপর্যয় এড়ানোর জন্য কমিটি সরকারের কাছে কার্যকর একটা পদক্ষেপ চায়। কারণ, এতদিন যে লকডাউন চলছে, তাতে অনেক অফিস শিল্প-কারখানা, দোকানপাট খোলা থাকে। তাতে যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সেটা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। সেজন্যে আগে থেকেই জাতীয় কারিগরি কমিটি শাটডাউনের কথা বলেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিনিয়ত তার রূপ পাল্টাচ্ছে অর্থাৎ তার মিউটেশন হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কাজেই স্ট্রেইন নিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই ভ্যারিয়েন্ট নয় স্বাস্থ্যবিধি অবহেলার কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে। মানুষের কাছ থেকে মানুষের মাঝে সংক্রমণ বন্ধ করাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ।