সড়ক দুর্ঘটনায় কোন প্রাণ গেলে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ঘটনার পিছনের ঘটনা খুঁজে বের করে শাস্তির দাবিতে জনতাকে ফুঁসে উঠতে দেখা যায়।
টেলিভিশন খুলতেই চরম ভাবে গরম হয়ে ওঠে টকশোর টেবিল। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে টিআরপি। নানামুখী আন্দোলনের মুখে নড়েচড়ে বসে বাস মালিক সমিতি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ।
কিন্তু গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) পথশিশু মরিয়মকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে গুরুতর আহত করে হত্যা করা হল। তাতে কার কি আসে গেল! সবাই চুপ, নেই কোন প্রতিবাদ, আন্দোলন কিংবা পথসভা। গরম হয়নি টকশোর টেবিলও।
তবে মরিয়মদের জীবন কি এভাবেই চলে যাবে শুধু মাত্র সংখ্যা হয়ে? এ প্রশ্ন আমার মত শত মানুষের। মরিয়মরাই কি এ দেশের বাস্তব চিত্র নয়!
জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয় মরিয়ম। করোনা গেলেও অভাব যায়নি তার পরিবারের। তাই আর স্কুলে ফেরা হয়নি তার। কখনো ফুল বিক্রি করে কখনো বা মানুষের কাছে সাহায্য নিয়েই চলত মরিয়মদের সংসার।
গত ৯ নভেম্বর সকালে অন্যদিনের মতই সাহায্যের আশায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে হতে রাইদা পরিবহনে ওঠে সে। প্রথমে যাত্রী মনে করে কিছু না বললেও সাহায্য চাইতে শুরু করলে চলন্ত বাস থেকে নামতে বাধ্য করা হয় তাকে।
তখন গাড়ির গতি ছিলো ঘন্টায় ৪০/৫0 কিলোমিটার। বাস থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পায় মরিয়ম। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনিয়মের নিয়মে চলে গেছে মরিয়ম। হয়নি কোন শোরগোল, চোখে পড়েনি কোন মানববন্ধন, ঝড় ওঠেনি টকশোর টেবিলে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আজ মরিয়ম তো কাল চলন্ত বাস থেকে আপনাকেও নামানো হবে।
মরিয়মের মৃত্যুতে দায়ী শুধু হেলপার কিংবা ড্রাইভার নয়। দায়ী এ সমাজ ব্যবস্থা, দায়ী ওই সিটিং সার্ভিসে থাকা উচ্চ শ্রেণির কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। যাদের একশ্রেণির মানুষ দেখলেই নাক সিটকানি আসে। শরীরে গা ঘেঁষলে দমবন্ধ লাগে। মানুষকে তারা কখনোই মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করতে পারে না। মানুষ তাদের কাছে বিবেচিত হয় চাকচিক্যময় পোশাক আর চকচকে জুতোর রঙে।
শীঘ্রই মানবিক অবস্থার এই অধঃপতনের উত্তরণ না হলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ধ্বংস অনিবার্য। তাই, অন্যায়ের প্রতিবাদ হোক সার্বিকভাবে সার্বজনীন। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত দিন মরিয়মদের ভিন্ন চোখে দেখা হবে ততদিন সমাজের উন্নয়ন হবে না।
সর্বোপরি এ ধরনের ঘটনা পুনরায় যেন না ঘটে তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে পরবর্তী শিকার হয়তো আপনি কিংবা আমি। রাস্তা হোক জীবনের, রাস্তা হোক নিরাপদ।
এফ এ শাহেদ: লেখক ও সাংবাদিক