আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান, জঙ্গিবাদের কথিত ‘ত্রিরত্ন’ এর ‘একরত্ন’ হাসিবুর রহমান ওরফে আয়যাম আল গালিবকে (২১) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিস)। তাকে গ্রেফতারে অনলাইনে প্রচারণা ৮০ শতাংশ কমে আসবে বলে দাবি করেছে সিটিটিসি। সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
আসাদুজ্জামান বলেন, রোববার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে হাসিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনি রাজধানীর একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র (আইন) শিক্ষার্থী। এর আগে অনলাইন প্রচারণার ‘ত্রিরত্নের দুই রত্ন’ আল আমিন সিদ্দিকী ও জোবায়দা সিদ্দিকী নাবিলাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
তিনি আরো বলেন, হাসিবুর রহমান মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নকালে সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হন তিনি। এই সময়ে তিনি বিপুল পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করেন। হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, প্রথমে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী ফেসবুক আইডি জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেইন’র মঙ্গে যুক্ত হন। এই আইডি দুটিতে তালেবান ও আল কায়েদার বিভিন্ন লেখালেখি হতো। তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করানো হতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখা ও মতাদর্শে আগ্রহী হয়।
তথ্য মতে, ‘২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এসব লেখা লেখির জন্য তিনি ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুকে মুয়াহিদ মুসলিম নামে আরও একটি পেজ ওপেন করেন। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এই পেজটি থেকে উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখেন।’
সিটিটিসি এর প্রধান আরো বলেন, সর্বশেষ তিনি আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করতেন।
হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারকারী ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্ন ইসা’ নামে আইডি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রিরত্ন’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া যায়। সম্প্রতি ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিবী ও জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
হাসিবুর রহমান কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসিবুর প্রথমে ফেসবুকে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদা বিষয়ক প্রচারণা চালানো জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেন নামের দুটি আইডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই দুটি আইডির বিভিন্ন কন্টেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ধরনের কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই দুটি আইডিও বন্ধ করে দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিবুরের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়। এর আগেও গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছেন হাসিব। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি তাদের পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
হাসিবুরকে গ্রেফতারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্বে দিবেন কে, এ প্রসঙ্গে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি-না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিবুর জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কে কে রয়েছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।