পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েও প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো.আমির হোসেনের বিরুদ্ধে।
চাকরি পাইয়ে দিবে বলে দুই ব্যক্তির থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মো. আমির হোসেন। টাকা নিয়েও চাকরি না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আলম মুন্সি ও মো. স্বপন।
চাকরির জন্য ধারকর্জ করে টাকা জোগাড় করে আমির হোসেনের হাতে তুলে দেন অসহায় আলম মুন্সি ও মো. স্বপন। অভিযোগকারী মো. আলম মুন্সি ও স্বপন দু’জনই রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকার বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আলম মুন্সির কাছ থেকে এক লাখ সত্তর হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আমির হোসেন। এছড়াও একইপদে চাকরি দেওয়ার নাম করে স্বপন নামের আরেক ব্যক্তির কাছ থেকে একলাখ চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন। এই অভিযোগে ডিএসসিসি’র মেয়র বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন প্রতারিত হওয়া মো.আলম মুন্সি ও স্বপন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মো.আলম মুন্সি ডিএসসিসি’র মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেছেন, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী সায়দাবাদ এলাকার বাসিন্দা, আমি এক বছরে দুই বার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী চালক মোঃ আমির হোসেনকে আমার ছেলে (মোঃ আশিক) কে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে চাকরী নিবে। আমি এই আশ্বাসে অনেক কষ্ট করে ঋণ নিয়ে দুইবারে মোঃ আমির হোসেনকে মোট ১ লাখ সত্তর হাজার টাকা দেই। মোঃ আমির হোসেন, আমার ছেলেকে পরিচ্ছন্নকর্মী পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয় কিন্তু সে এখন চাকরি তো দুরের কথা আমার সাথে দেখা কথাবার্তা কোন কিছুই করছে না। বর্তমানে মোঃ আমির হোসেন এখন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার ও উল্টাপাল্টা কথা বলে।
টাকা নিয়েছে সেটাও অশ্বিকার করছে। আমি খুব গরীব অসহায় মানুষ। এমতাবস্তায় আমি অসহায় ও কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে আপনার কাছে ঘটনাটি জানালাম। অতএব, মহোদয়ের নিকট আমার আবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, আমার টাকা যাতে ফেরৎ পাই সেই ভরসায় আপনার নিকট এর সু-বিচারের আজ্ঞা প্রকাশ করছি।
এছাড়া মেয়রের বরাবর স্বপন নামের আরেক ব্যক্তি আমির হোসেনের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন।
প্রতারণার স্বাধীকার মো. আলম মুন্সি বলেন, আমার মেয়ের স্বামীর সঙ্গে মোঃ আমির হোসেনের ভালো সম্পর্ক ছিলো। সেখান থেকে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো এবং পরিচয়। আমির হোসেন আমার ছেলে আশিককে পরিচ্ছন্নকর্মীর চাকরি দেবে বলে চার লাখ টাকা চায় কিন্তু আমি ১ লাখ সত্তর হাজার টাকা দেই। চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিলেও প্রায় এক বছর হয়ে গেছে কিন্তু চাকরি বা টাকা কিছুই দিচ্ছে না। টাকা চাইলে অস্বীকার করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। এজন্য মেয়র সাহেবের বরাবর আমির হোসেনে বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছি।
প্রতারণার স্বাধীকার মো. স্বপন বলেন, মোঃ আমির হোসেনের ময়লাও বর্জ্যের নেওয়ার গাড়ি আমি চালাতাম। সেই খান থেকে তিনি আমাকে পরিচ্ছন্নকর্মীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে তিন লাখ টাকা চান। আমার পরিবার তাকে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দেয়। এর কয়েকমাস পরে আমাকে তার গাড়ি চালাতে না দিয়ে অন্যকে গাড়ি বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে চাকরি জন্য অপেক্ষা করি। এখন পরে ফোন দিলে তিনি আমার ফোন ধরেন না,টাকা চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান এবং অস্বীকার করেন। এজন্য মেয়র বরাবর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।
মোঃ আমির হোসেন বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী চালাই,আমি যোগ্য সৎ ও দক্ষ বলেই এখানে আসতে পারছি। চাকরি দেওয়া নাম করে কারো কাছে থেকে টাকা নেই নাই। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমি যদি চাকরির নাম করে টাকা নিয়ে থাকি মো.আলম মুন্সি ও স্বপন যদি প্রমাণ দিতে পারে আমার যে বিচার হবে তাই মাথা পেতে নেব। তাদেরকে চিনি না। তারা আমার বাসায় গিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করছে, এটা নিয়ে আমি ৯৯৯ ফোন দিয়েছি। র্যাব এসে আমাকে উদ্ধার করেছে এবং থানায় জিডি করেছি।
তিনি বলেন, আমি একজন গাড়ি চালক শ্রমিক সংগঠনের প্রচার সম্পাদক। গাড়ির চালকদের অনিয়ম নিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম এরপর থেকে কিছু লোক আমার পেছনে লেগেছে।
ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ বলেন, ডিএসসিসির কোনো কর্মকর্তা যদি চাকরির নাম করে প্রতারণা করে প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগের চিঠি পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি মিথ্যা অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।