শীতকাল এলে অগ্নিকাণ্ড বাড়ে। প্রতিবছর কয়েক হাজার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কিছুতে বন্ধ হচ্ছে না এই আগুন লাগার ঘটনা। কিন্তু কেন এই মৌসুমে আগুনের ঘটনা বেশি। এমন প্রশ্ন অনেকের। গেল বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ হাজার ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ২ হাজার ৫৮০ জন এবং আহত ১১ হাজার ৯৯৯ জন।
শীতকালে কেন এত অগ্নিকাণ্ড- এর কারণ ও জবাব খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মৌসুমে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলেও সব কিছু শুকনো থাকে। বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে। পাশাপাশি এই সময়ে বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে থাকে গ্যাসলাইনের লিকেজ, গ্যাসের চুলা, বিদ্যুতের লাইনের দুর্বল সংযোগ ও খড়কুটোর আগুন থেকে। বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্য ও অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্টরা এসব জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গেল বছরের তথ্য বলছে, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আগুন লাগার ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই মাসগুলোতে আবহাওয়া প্রায় শুল্ক থাকে। ঢাকার দুই সিটিতে ৭৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের ২০ হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০ স্বেচ্ছাসেবী কর্মী রয়েছে। যাদের আগুন নিয়ন্ত্রণ, সহযোগিতা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো প্রশিক্ষণ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খড়কুটো ও গ্যাসের লাইনের সমস্যার কারণেই আগুনের ঘটনা ঘটে না। আরও ঘটে বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ লাইনের কারণেও। ফলে খুব সহজেই বিদ্যুতের লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। বিদ্যুতের আগুনের অন্যতম কারণ দুর্বল সংযোগ। দুর্বল সংযোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও আসা দুটোই বাধাগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক কারণে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী মানুষ সরকারি খাস জমিতে বস্তি তুলে টাকা কামায়। ফলে বস্তিগুলোতে শীতকালে অগ্নিকাণ্ড বেশি ঘটে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ওয়ারিংয়ের কারণে শুধু নয়, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের (টিভি, কম্পিউটার, ফ্রিজ ও ব্লেন্ডার মেশিনসহ যাবতীয় পণ্য) কারণেও শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। তারা আরও বলছেন, শীতকালে গ্রামেগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড বেশি ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও বিশ্লেষকরা বলছেন, চারপাশে আমাদের আবওহাওয়াটা শুষ্ক। এ ছাড়া যেসব দাহ্য বস্তু আছে সবগুলোতেই এখন জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম ও শুষ্ক। বাসাবাড়িতে আগুন লাগলে আসবাবপত্র শুষ্ক থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগলে প্রচণ্ড বাতাস থাকে। বাতাসের পরিমাণটা বেশি। শুল্ক বেশি। বাতাস আগুনের প্রবাহটা বাড়তে সাহায্য করে ফলে দ্রুত তা বাড়ে। শীতকালে ঠান্ডার কারণে গ্রামে-গঞ্জে চুলার আগুনের ব্যবহারটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া শীত নিবারণের জন্য খড় দিয়ে আগুনের তাপ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ফলে সেই আগুনের তাপ নিতে গিয়ে গায়ে থাকা চাদর ও কাপড়ে আগুন লাগে। এতে অনেকেই দগ্ধ হয়ে মারা যায়। এসবই অন্যতম কারণ। এ ছাড়া জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার ও চাপ বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডাজনিত কারণে মানুষ অনেকভাবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এর আগে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ২০১২, ১৫ ও ১৬ সালেও অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বস্তিগুলোয় আগুন লাগার নেপথ্যের কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বৈধ সংযোগ না থাকা, ঘিঞ্জি পরিবেশে ঘরগুলো তোলা এবং বিদ্যুতের নিম্নমানের কেবল ব্যবহার করার কারণে এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটে চলেছে।
অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর সূত্রে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রথমে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আগুন সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। যাতে সেটি বিপজ্জনক অবস্থায় না যায়। যেসব দাহ্যপদার্থ আছে সেগুলোতে যাতে আগুন না লাগে সে জন্য পানি হাতের কাছেই রাখতে হবে। পানির রিজার্ভারগুলো বাড়াতে হবে। যাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সহজে পানি পান এবং তাদের গাড়িগুলো সহজে সেই এলাকায় ঢুকতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে