করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এর সকল সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাপক কর্মসূচি ছিল, কিন্তু আমরা সব ভার্চুয়ালি করছি।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা নতুনভাবে হানা দিয়েছে। সবাই নিয়ম মেনে চলবেন। মাস্ক পরবেন। সবকিছু স্বাভাবিক চলুক আমরা চাই। দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করছি। ফলে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাব। এ বছর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আছে, আমরা সেগুলো উদ্বোধন করব। দেশের মানুষের জন্য গত ১৩ বছরে আমরা অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি। যা আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ঢাকা ও রাঙামাটি জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হলুদ জোন বা মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে রাখা হয়েছে যশোরসহ সীমান্তবর্তী আরও ছয় জেলাকে। আর গ্রিন জোনে রয়েছে ৫৪টি জেলা। এদিকে খুবই কম সংখ্যক টেস্ট করার তালিকায় রয়েছে দুটি জেলা।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতর গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে করোনা ড্যাশবোর্ড ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার ১২.৯০ শতাংশ আর রাঙামাটিতে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া হলুদ জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে আছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নাটোর ও রংপুর জেলা। এসব জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে অবস্থান করছে।
আর সংক্রমণের গ্রিন জোন বা ক্ষীণ ঝুঁকিতে আছে ৫৪ জেলা। অন্যদিকে পঞ্চগড় ও বান্দরবান জেলায় নমুনা পরীক্ষার হার খুবই কম হয়েছে।
পূর্ববর্তী সাতদিনের চেয়ে গত সাতদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ১৬৯.১২ শতাংশ। তবে এতে মৃত্যু হার কমেছে ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন বা লাল, হলুদ ও সবুজ – এই তিন ভাগে ভাগ করে থাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে।
এর আগে, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার এরইমধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে। বিস্তার ঠেকাতে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ এবং গণপরিবহনে যাত্রী অর্ধেকসহ ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আগামীকাল- বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে এ নির্দেশ বা বিধিনিষেধ কার্যকর শুরু হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণায় সভায় এই ১১ দফা নির্দেশনা জারির সিদ্ধান্ত হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো- দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে আবশ্যিক মাস্ক ব্যবহার। বেস্তোরাঁয় খাবার খেতে এবং আবাসিক হোটেলে থাকতে হলে টিকা সনদ প্রদর্শন, ১২ বছরের ঊর্ধ্বের সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া।
স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো। ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিক টিকা সনদ থাকা, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন।
স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক পরার বিষয়ে দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামগণের সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা, করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করা। উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ বন্ধ রাখা।