২০২০ সালে নার্গানো-কারাবাখকে ঘিরে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এর মধ্যে তুমুল যুদ্ধের পর আবারো নতুন করে সংঘাতে জড়িয়েছে দুই প্রতিবেশী। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে নতুন করে সৃষ্ট সংঘাতে ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ সেনার মৃত্যুর খরব জানা গেছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের ভাষ্যমতে, এক রাতের সংঘাতেই দেশের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের ৫০ সেনার নিহতের কথা জানিয়েছে আজারবাইজান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। নার্গানো-কারাবাখকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতটিতে বড় রকমের তা এক রাতেই সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যাই স্পষ্ট করে।
সম্প্রতি সংঘাতের সৃষ্টি হলেও দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। আর্মেনিয়ার দাবি করছে যে সীমান্তের নিকটবর্তী একাধিক শহরগুলোতে আজারবাইজানের নিক্ষেপ করা আর্টিলারি শেল আঘাত হানে। পাল্টা জবাবে ইয়েরেভানও আজারবাইজানের সামরিক স্থাপনায় হামলা করে। আজারবাইজান বলছে, হামলাটা প্রথমে আর্মেনিয়াই করেছে।
সোমবার রাতে লড়াই অব্যাহত থাকার পর মস্কো দুই দেশের মধ্যে একটি সিজফায়ার (Ceasefire) চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছে। যা মঙ্গলবার সকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটি এখন পর্যন্ত তিনবার পুরোদমে যুদ্ধে জড়িয়েছে। যদিও দুই দেশের সেনাই গত তিন দশক ধরে নিয়মিত বিরতিতে ছোটখাটো সংঘাতে জড়িয়েছেন।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সংঘাত কমেছে, কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়নি। দুই তিনটি স্থানে এখনো আজারবাইজানের পক্ষ থেকে হামলা করা হচ্ছে।’ অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশটির ‘উসকানির’ পর নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আজারবাইজান।
প্রতিবেশী দুই দেশের সংঘাতের নেপথ্যে রয়েছে বিতর্কিত নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত অনুযায়ী এটি আজারবাইজানের অংশ। তবে সেখানকার বাসিন্দারা জাতিগত আর্মেনীয়।
২০২০ সালের যুদ্ধে আজারবাইজানের পরিস্কার বিজয়ও এই সংঘাতকে প্রতিহত করতে পারেনি। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়ে রূপলাভ করেছে। এটি এখন সাংস্কৃতিক বিভাজন রাজনীতি ছাড়িয়ে ধর্মীয় বিষয়ে গড়িয়েছে। কারণ, আর্মেনিয়া খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
অন্যদিকে, আজারবাইজানের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই মুসলিম। ১৯৯১ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি হয়। এর আগে দুটি দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য ছিল। আজারবাইজানের দাবি এখানে আর্মেনীয়রা অবৈধভাবে বসবাস করে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। এতে ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ২০২০ সালের যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এরপর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী আর্মেনিয়া বড় একটি অঞ্চল ছেড়ে দেয়। আর রাশিয়া সেখানে নিজেদের শান্তিরক্ষী পাঠায়।