দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুক গ্রুপ কর্তৃক আয়োজিত নারী উদ্যোক্তাদের মেলা। নরসিংদী সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে বঙ্গবন্ধু পৌর শিশুপার্কে প্রতি শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই মেলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে মেলার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনী করা হয় নরসিংদী বঙ্গবন্ধু পৌর শিশুপার্কে। এখানে ৫০ জন উদ্যোক্তা পাটজাত পণ্য, ব্লক, বাটিক, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, কাঠের তৈরি কারুপণ্য, কেক, আইক্রিম, নাড়ু, ঝাড়ু, গাছের চারা, থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, গোল জামা, বিভিন্ন জাতের তৈরি খাবারের স্টল দেন। মেলায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নারী উদ্যোক্তারা এসে খোলা আকাশের নিচে টেবিল-চেয়ার নিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। নান্দনিক এসব পণ্য তুলনামূলক কম মূল্যে পেয়ে খুশি ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারী উদ্যোক্তাদের বাহারি পণ্যের মেলা। এই মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগমও বাড়ছে। এখানে অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তারা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা করেন। প্রতি সপ্তাহে এই মেলার ফলে ক্রেতা ও উদ্যোক্তাদের এক মিলনমেলা ঘটে৷
এই মেলায় কেনাকাটা করতে শিবপুর থেকে এসেছেন কেয়া দাস নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য সুন্দর একটা সুযোগ, এখানে বাজারের সবকিছু পাওয়া যায়। তাই প্রতি সপ্তাহে সুযোগ করে এখানে এসে কেনাকাটা করি।’
নরসিংদী পৌর শহরের বাসিন্দা শারমিন সুলতানা প্রিয়া বলেন, ‘ফেসবুকে দেখি নরসিংদী বঙ্গবন্ধু পৌর শিশুপার্কে নারী উদ্যোক্তাদের মেলা চলেছে। এখানে এসে দেখলাম আসলে অনেক কিছু পাওয়া যায়। বাজার থেকেও তুলনামূলক দাম কম।’
শিবপুর থানার মোহরপাড়া গ্রামের ছাদেকুজ্জামান জানান, তিন মেয়ের মাঝে ছোট মেয়ে মৌসুমী এই মেলায় পণ্য বিক্রি করেন। তাকে সহযোগিতা করছেন তিনি। নিজেদের বাসায় তৈরি করা পিঠাপুলি, বাহারি ধরনের খাবার, বস্ত্র ও পণ্যসামগ্রী নিয়ে বিক্রি করেন তারা। এই মেলায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়।
স্ত্রীকে সহযোগিতা করতে এই মেলায় আসেন মো. আলতাফ শরীফ। তিনি বলেন, ‘এখানে বেশির ভাগ দোকানি নারী উদ্যোক্তা ও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন। নারীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে মেলায় এসে পণ্য বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’
নরসিংদীর নারী উদ্যোক্তাদের এই মেলায় স্বল্প মূল্যে মিলছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পোশাক। দুই দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেন পারভিন আক্তার নামে এক নারী উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ‘নরসিংদী বাসাইল প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা ও প্রতিবন্ধী মহিলা সংস্থার অর্থায়নে তারা দুটি দোকান নিয়ে এই মেলায় বস্ত্র বিক্রি করছেন। এই মেলার লভ্যাংশ সব প্রতিবন্ধীর মাঝে খরচ করা হয়।
নরসিংদী নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুক গ্রুপ কর্তৃক আয়োজিত নারী উদ্যোক্তাদের মেলা অনেক দিন ধরে খোঁজখবর রাখেন মেহের নিগার। পরে দুই মাস আগে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এখন চাকরির পাশাপাশি এই মেলায় প্রতি সপ্তাহে বস্ত্রজাত পণ্য বিক্রি করেন তিনি।
নারী উদ্যোক্তা ও মেলা পরিচালকদের প্রধান সাবরিনা সরকার বলেন, ‘মাত্র ১০ জন উদ্যোক্তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু হয় নরসিংদী নারী উদ্যোক্তাদের মেলার সূচনা। প্রথমে বাড়ির ছাদে, পরে স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে। ছয় মাস আগে নারী উদ্যোক্তাদের সম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু পৌর শিশুপার্কে বসে এই মেলা। সবার সার্বিক সহযোগিতায় আজ ৩০০-এর ওপর উদ্যোক্তা রয়েছেন এই মেলায়। তবে সবাই মেলায় অংশ নেন না। বাকিরা নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত আছেন। এই গ্রুপে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য রয়েছেন।’