এশিয়ার সর্ববৃহৎ দল দাবি করা আওয়ামী লীগ আজ অস্তিত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেছেন, হাসিনা পালায় না! অথচ ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ দলের শীর্ষ নেতারা লেজ গুটিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর দনিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজেও বলেছিল, আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলার মাটিতে এমনভাবে প্রোথিত, শত চেষ্টা করেও একে কেউ উপড়ে ফেলতে পারবেও না, আওয়ামী লীগকে ছিন্নভিন্ন করা যাবে না।’
আজ কেন আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন প্রশ্ন রেখে ড. মাসুদ বলেন, ‘স্বৈরচারী করে, জনগণের বুকে গুলি চালিয়ে, জনগণের কণ্ঠরোধ করে, দেশের সম্পদ পাচার করে জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যায় না, যাবে না। জনগণের ভালোবাসা পেতে হলে জামায়াতে ইসলামীর মতো জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণকে ভালোবাসতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর ওপর শেখ হাসিনা যতই জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে, একদিনের জন্যও জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। জামায়াতের একজন আমিরের ফাঁসি দেয়ার আগেই আরেকজন আমির দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দল চালানোর জন্য একটা লোকও পাওয়া যায়নি। এতেই বুঝা যায়, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের মতো দলের ভেতরেও একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বুঝে না এবং বিশ্বাস করে না। সে জন্যই তারা একব্যক্তির কৃতিত্বে দেশ ও দল পরিচালনা করেছিল। জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই জামায়াতে আমির যে কেউ হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবারের থেকে জামায়াতের আমির হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে বিনা কারণে সৃষ্টি করেননি, আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। জামায়াতে ইসলামী দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের জন্য যোগ্য মানুষ তৈরির কাজ করে। জামায়াতে ইসলামী এক আল্লাহর গোলামী করার কারণেই শুধু আওয়ামী লীগ নয় আরো অনেক বন্ধু দলও জামায়াতে ইসলামীকে ভয় করে। কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ গোপনে ভয় করে। তাদের ভয়ের কারণ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে তারা চুরি করতে পারবে না, দুর্নীতি করতে পারবে না, জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে পারবে না, সন্ত্রাসী করতে পারবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামপন্থীদেরকে মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি ঢুকাতে পারবে না। মানুষ ইসলামের সুমহান নিদর্শন দেখে ফেলবে। তবে ইসলাম বিদ্বেষীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, মানুষ এখন দলে দলে ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’
ইসলামের বিজয় অতি নিকটে বলেও দাবি করেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
যাত্রাবাড়ী দক্ষিণ থানা আমির নওশেদ আলম ফারুকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মতিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সম্পাদক ও কর্মপরিষদের সদস্য ড. মোবারক হোসাইন।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন কদমতলী উত্তর থানা আমির আবদুর রহিম জীবন, কদমতলী উত্তর থানা শূরা ও কর্মপরিষদের সদস্য ওমর ফারুক, তালিমুল মিল্লাত মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মিজানুর রহমান, কদমতলী উত্তর থানা নায়েবে আমির হালিম মিয়াজী, জামায়াত নেতা আবু সায়েদ, দনিয়া ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা মোস্তফা কামাল, দনিয়া ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মোবারক হোসাইন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সুস্থতার পরবর্তীতে কর্মের ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতা এলে মদিনা সনদে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে। মদিনা সনদেই রয়েছে একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বির্নিমানের সকল আয়োজন। যেখানে কোনো বৈষম্য নেই। জাতি ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে সকলেই সমান। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন হবে অভাবনীয়। মদিনা সনদে দেশ পরিচালিত হলে দেশের নাগরিককে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে না, রক্ত দিতে দিবে না, জীবন দিতে হবে না। নাগরিক তার মৌলিক সকল অধিকার রাষ্ট্র থেকে পাবে।’
তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছায়াতলে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
সুধী সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ড. শফিকুর ইসলাম মাসুদ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের পরিবারের মাঝে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।