মানবিক সহায়তা ও ১৬ আরোহী যাত্রী নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার অভিমুখে যাত্রা করা একটি জাহাজে ড্রোন থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ভূমধ্যসাগরের দেশ মাল্টার উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলার শিকার হয়ে বিকল হয়ে গেছে জাহাজটি। এ হামলায় কেউ হতাহত হয়নি। মানবিক সহায়তা প্রদানকালী সংগঠন ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’ এর ব্যবস্থাপনায় তিউনিশিয়া থেকে মাল্টা হয়ে গাজার উপকূলে যাচ্ছিল জাহাজটি। মাল্টা থেকে আরও ৪০ মানবিক সহায়তাকারী কর্মীকে নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল জাহাজটির। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
শুক্রবার (২ মে) এক বিবৃতিতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন এ তথ্য জানিয়েছে। হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে সংগঠনটি বলছে, নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সম্মুখভাগে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ হতে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
বৃহস্পতিবার (১ মে) স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২০ মিনিটে জাহাজটিতে পর পর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে ও এতে আগুন ধরে যায়। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয় মাল্টা সরকারের পক্ষ থেকে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে এ হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। তখন ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। জাহাজে গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তার পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা ছিলেন।
জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছেন।
অন্যদিকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ২১ দেশের অধিকারকর্মীরা জাহাজটিতে ছিলেন। ইসরায়েল বেআইনিভাবে গাজা অবরোধ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদ এবং গাজাবাসীর জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা যাত্রা করেছিলেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব চাইতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের অবশ্যই তলব করতে হবে।’
হামলার পর এক ঝুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ‘আজই আমার এ জাহাজে করে গাজায় যাওয়ার কথা ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সেখানে ইসরায়েলি অবরোধ উপেক্ষা করে একটি মানবিক করিডোর খোলা। কিন্তু হামলা করে জাহাজের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। ফলে এ জাহাজে করে মিশনটি আর চালানো সম্ভব নয়।
এর আগে ২০১০ সালেও তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ফ্রিডম ফ্লোটিলার কর্মীরা। মাভি মারমারা নামের ওই জাহাজে একপর্যায়ে হামলা চালিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাতে ১০ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছিলেন। তখন সারা বিশ্বে এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে।
দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে গাজায় আবার সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর দুই মাস ধরে উপত্যকাটি কঠোরভাবে অবরোধ করেছে দেশটি। গাজায় তারা কোনো খাবার, জ্বালানি, ওষুধসহ জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য জিনিসপত্রও নিতে দিচ্ছে না।
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো বলেছে, তারা এর মধ্যে তাদের মজুদ করা খাদ্যপণ্যের শেষভাগটাও বিতরণ করে ফেলেছে। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, গাজায় দুর্গতদের খাবার সরবরাহ করা রান্নাঘরগুলো আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বছরের মার্চের পর থেকে হামলার অন্তত ২ হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স