পাকিস্তানের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান উত্তর ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্রসহ ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (১০ মে) পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটিসহ তিনটি বিমান বাহিনীর স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই ঘাঁটিটি ইসলামাবাদের থেকে ১০ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী শুক্রবার গভীর রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, ভারত তার বিমানের মাধ্যমে আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে… এ সময় পাকিস্তানের নূর খান বিমানঘাঁটি, মুরিদ বিমানঘাঁটি এবং শোরকোট ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের ছোড়া মাত্র কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষা সীমানা অতিক্রম করতে পেরেছে এবং সেগুলো বিমান ঘাঁটির কোনো সম্পদে আঘাত হানতে পারেনি।’
সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, ভারত ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের সংরক্ষণাগার সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ভারতের পাঠানকোট বিমানঘাঁটি এবং ভারতীয় কাশ্মীরের উধমপুর বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও আঘাত হেনেছে পাকিস্তান।
ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে জানায়, ভারতের সামরিক বাহিনী শিগগিরই এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করবে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এক্স-এ একটি পোস্টে জানান, ‘ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’। এই শব্দটি কোরান থেকে নেওয়া। এর অর্থ একটি দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ কাঠামো।’
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী স্থানীয় টেলিভিশনে বলেছেন, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু এড়াতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভারতের শ্রীনগর এবং জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেখানে সাইরেন বাজানো হয়।
ভারতের কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ অঞ্চলকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণ রেখার রাজৌরিতে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে স্থানীয় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।’
অন্যদিকে, ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্থান টাইমস জানান- ভারত ও পাকিস্তানের চলমান হামলা এবং উত্তেজনা নিরসনে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন জি-সেভেন গ্রুপ উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং সরাসরি সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া সংগঠনটি বিবৃতিতে ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলারও নিন্দা জানায়।
ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আহ্বান জানিয়েছে সেটার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওমর আবদুল্লাহও বলেন, ‘যেখানে পাকিস্তানের অস্ত্রের জন্য আইএমএফ পাকিস্তানকে অর্থের যোগান দিচ্ছে সেখানে উপমহাদেশের উত্তেজনা কীভাবে কমবে, সেটা আমি নিশ্চিত নই।’
এ দিকে শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানের লাহোর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশোয়ার শহরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধে জড়িয়ে থাকা এই দুই দেশ বুধবার থেকে প্রতিদিনই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এর আগে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ধ্বংসের নামে হামলা চালায়। অন্যদিকে পাকিস্তানও প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রয়টার্স জানায়, বুধবার থেকে উভয়পক্ষে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি। সূত্র: রয়টার্স, দ্য হিন্দুস্থান টাইমস