July 31, 2025, 2:00 pm

গ্যাস স্টেশনে মিটার জালিয়াতির তদন্তে প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও এখনও বহাল তিতাসের জিএম!

Reporter Name 147 View
Update : Tuesday, November 6, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্যাস স্টেশনে মিটার জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের প্রায় চার কোটি ২৪ লাখ টাকা ক্ষতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেও বহাল তবিয়তে আছেন তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডটি কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি এর কোনো জবাব দেননি। রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও দায়ের হয়নি।
জানা গেছে, গত গাজীপুরের কুনিয়ায় মেসার্স যমুনা সিএনজি স্টেশনের মিটারে জালিয়াতির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের গ্যাস কারচুপির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সিএনজি খাতে চার কোটি ২০ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে মিটার শ্লথজনিত বিল বাবদ তিন লাখ ৩৯ হাজার ৮৮২ টাকা। প্রকৌশলী ওহাবের ছত্রছায়ায় একটি সিন্ডিকেট সরকারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়, এটির মতো আরও অন্তত ১৫টি স্টেশন থেকে এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে গত ১৮ অক্টোবর ওহাবের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল। ১০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দেয়ার কথা বলা হলেও এখনও তা হয়নি। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত করলে সেখানেও অভিযোগের সত্যতা মেলে।
নোটিশে অভিযোগ করা হয়, গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী অনুযায়ী মিটার বিকল শণাক্তকরণের ১৫ দিনের মধ্যে মিটার পরিবর্তনের নিয়ম থাকলেও একজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিকল মিটার পরিবর্তন করতে লেগে যায় সাড়ে ৫ মাস। মিটার বিকলকালীন সময়ে বিল প্রস্তুতকরণের নির্দেশনাও অমান্য করা হয়।
অভিযোগ করা হয়, সরকারি নির্দেশে বন্ধ থাকার পরেও ক্যাপটিভ খাতে চালনা ধাচ বাড়িয়ে লোড বৃদ্ধি করা হয়। এভাবে নানা কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে চার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির বিষয়টি প্রকৌশলী ওহাবের নজরে এলেও তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে কোনোরকম ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি।
আরও অভিযোগ করা হয়, কোম্পানির আবিডি-গাজীপুরের অধীনে শিল্প, ক্যাপটিভ ও সিএনজি শ্রেণির ২২০৫ জন গ্রাহকের মধ্যে ৩৭৮ জন গ্রাহক অনুমোদনের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করছে, ৬১ জন গ্রাহকের মিটার বিকল থাকার কারণে গ্রাহক গড় বিল প্রদানের সুবিধা পাচ্ছে এবং ৭১৬ জন গ্রাহক বিল খেলাপী হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এভাবে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার, গড় বিল প্রদান, বিল খেলাপীর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়।
এমনকি পেট্রোবাংলার গঠিত মনিটরিং সেলের কোম্পানির গাজীপুরের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি বলেও ওহাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহক অনুমোদন অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার, অনুমোদনের অতিরিক্ত অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন সরঞ্জাম স্থাপন, বিকল মিটার যথাসময়ে অপসারণ না করায় গড় বিল প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, নিয়মিত গ্রাহক আঙিনা পরিদর্শন না করা, খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, গ্যাস ব্যবহার মনিটরিং না করা, চালনা ধাঁচ ব্যত্যয় হওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, স্ট্যান্ডবাই সরঞ্জামকে রেগুলার হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া, মিটার টেম্পারিং, কারণ-অকারণে বিল ইস্যু বা সংশোধন, বাইপাস লাইন নির্মাণ, ধার্যকৃত জরিমানার অতিরিক্ত বিল পুনঃসংশোধন, টারবাইনের সাথে ইভিসি এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ না করা, গেজেটের ব্যত্যয় করে গ্রাহককে কিস্তি সুবিধা প্রদান ও কিস্তি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না হওয়া সত্ত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় কোম্পানি তথা সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে জালিয়াত সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা এবং দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা দায়ের হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর