December 1, 2025, 1:05 pm

জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী: রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরানোর তাগিদ

Reporter Name 159 View
Update : Wednesday, July 10, 2019

ডেস্ক রিপোর্ট | বুধবার,১০ জুলাই ২০১৯:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের কারণে আমাদের ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। ওখানে আমাদের যত পাহাড়ি এলাকা বা জঙ্গল ছিল, সেগুলো কেটে-ছেঁটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটি অনেকটা অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এজন্য আমরা চাই-দ্রুততম সময়ে তারা নিজ দেশে ফেরত যাক। তারা যত তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যাবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল হবে।’

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃতি এবং এর প্রভাব প্রশমনে নিজেদের সক্রিয় উদ্যোগ সম্পর্কে আরও সচেতন হতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থাকতে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করছি।’

বুধবার (১০ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দুই দিনব্যাপী জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’র (জিসিএ) ঢাকা বৈঠকে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও অর্থায়নের যুগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে, যা সবাই সহজে কাজে লাগাতে পারি। তথাপি আমি বলতে চাই, অভিযোজনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেজন্য সুষ্ঠু প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অভিযোজন প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।’

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি. হেইন, গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশনের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন এবং সম্মেলনের কো-চেয়ার এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা সম্মেলনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ ও কৌশল সম্পর্কে বান কি-মুন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এখানে বাংলাদেশের কাছে শিখতে এসেছি। অভিযোজনের বিষয়ে শেখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো শিক্ষক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাবউদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্লোবাল কমিশন অব এডাপটেশনের সহযোগিতায় আমরা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক অভিযোজন কৌশলের পাশাপাশি সাশ্রয়ী পন্থা ও ঝুঁকি নিরসন ব্যবস্থার সুবিধা পেতে চাই। আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে অনুষ্ঠিতব্য ক্লাইমেট চেঞ্জ সামিটের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর জন্য। ওই সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশসমূহ ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাকে বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে একটি ‘রিজিওনাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার’ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি রাখে। আমি বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করতে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় বান-কি মুনকে ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব অনুমিত সময়ের আগেই আমাদের প্রত্যেকের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেজন্য এর প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বকে বিনিয়োগে আরও বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি শুধু নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে। তখন সেখানকার মানুষ কোথায় যাবে, সে কথাও আমাদের ভাবতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে প্রায় এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উপরে পৌঁছেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল মানব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল। জার্মান ওয়াচের ক্লাইমেট চেঞ্জ ভার্নাবিলিটি ইনডেক্স- ২০১৮ অনুসারে, ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৬ সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ছিল ষষ্ঠতম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এডিবির জলবায়ু এবং অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আমাদের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ কমে যাবে। যদি বর্তমান হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আমাদের ১৯টি উপকূলীয় জেলা স্থায়ীভাবে ডুবে যাবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রতল বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ বলছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ জলবায়ু অভিবাসী রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যে বিশাল উন্নতি হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে আজ তা হুমকির সম্মুখীন। জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করতে তার সরকারের নিরলসভাবে কাজ করার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসমূহ অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বছরে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছি। এ সময় তিনি জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচির জন্য ৪২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি এ ফান্ডে বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেন।

জলবায়ু অভিযোজনে ‘সেরা শিক্ষক’ বাংলাদেশ : বান কি-মুন
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ‘অলৌকিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ু অভিযোজনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এ দেশ।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ বিষয়ে ঢাকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় ধারণার উন্নয়নে গঠিত এ কমিশনের চেয়ারম্যান বান কি-মুন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা থেকে শিখতে।’

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) বলছে, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা আর যদি এক মিটারও বাড়ে তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ফণীতে ১২ জনের প্রাণহানির সঙ্গে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণ নেওয়া ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের তুলনা করেন বান কি-মুন।

বাংলাদেশ দেখিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর উত্তম পন্থা : বিশ্বব্যাংক সিইও
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংক সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, উন্নয়নই যে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জনের সেরা উপায়, সেটি বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কমিশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জর্জিভা বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন আমি হাইস্কুলে পড়তাম। তখন থেকেই আমি এ দেশে আসার স্বপ্ন দেখতাম। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ যেভাবে সাফল্য অর্জন করেছে, তাতে আমি মুগ্ধ। মাথাপিছু আয় ১০০ ডলার থেকে বেড়ে ১৫০০ ডলার হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনার পথে ভালোভাবেই রয়েছে বাংলাদেশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। দেশটি বিশেষত নারীর ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে পেরেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সামনের দিকে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জর্জিভা।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর