August 5, 2025, 6:14 am

রাজধানীর দক্ষিণখানে কৌশলে ধর্ষণ ও বলৎকার করতেন লম্পট ইমাম

Reporter Name 137 View
Update : Monday, July 22, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার,২২ জুলাই ২০১৯:
দোয়া-তাবিজ-কবজ ও ঝাঁড়-ফুঁক করতে আসা নারীদের কৌশলে ধর্ষণ করতেন মসজিদের ইমাম। সেই দৃশ্য আবার মোবাইলে ধারণ করে রাখতেন। নারী ছাড়াও এই লম্পট ইমামের হাতে বলাৎকার হয়েছে ১০ জনেরও বেশি শিশু। এসব বিষয় ফাঁস করতে চাইলে তাদের দুষ্টু জিন দিয়ে ক্ষতি করার ভয় দেখাতেন তিনি।

এসব অপরাধের সাথে জড়িত রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদকে (৪২) গতকাল রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব-১) এর সদস্যরা।

মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদরায় শিক্ষকতাও করতেন তিনি।

সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

গ্রেফতার ইদ্রিস আহম্মেদ ২০০২ সাল থেকে দক্ষিণখানের মসজিদটিতে ইমামতি করতেন। ১৯৯৮ সালে সিলেট থেকে টাইটেল পাস করে। স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। সে সময়ও একই অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের কাছে কয়েকজন অভিযোগ করেন মসজিদের এই ইমাম এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কু-কর্ম করে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা গোয়ান্দা নজরদারি চালাই। পরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তিনি ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া ও তাবিজ-কবজের কাজ করতেন। এলাকায় প্রচার করেছিল তিনি জিন কজ্বায় রাখতে পারেন। এই জিন কজ্বা ছিল তার একটি বড় হাতিয়ার।’

লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তিনি (ইদ্রিস) একটি সোসাইটি গঠন করে প্রচার করেছিলেন এটা হুজুরদের মাধ্যমে পরিচালিত। এখানে কোনও সুদের কারবার হবে না। এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয়রা যখন টাকা ফেরত চেয়েছেন তখন প্রচার করেন, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তারা টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছে; তাই টাকা দেয়া সম্ভব না। পরবর্তিতে আবার বলেন, একটা বড় জমি কিনে জমির লাভ সকলকে দেয়া হবে। কিন্তু জমির টাকা এখনও কাউকে দেননি তিনি। উত্তরখানের বিভিন্ন গার্মেন্টস ও প্রতিষ্ঠান থেকে মসজিদ ও মাদরাসার কথা বলে টাকা তুলতেন এই ইমাম। কিন্তু সেসব টাকা ব্যক্তিগত কাজে লাগানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে।’

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘মহিলারা তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুঁক করতে এলে তাদেরকে মসজিদে তার কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতেন এবং তা ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। অনেক নারী চেয়েছিলেন ওই ইমাকের মুখোশ খুলে দিতে। কিন্তু সামাজিক অবস্থার কারণে তা করতে পারেননি। এসব কথা ফাঁস হবার ভয়ে সবাইকে জিনের ভয় দেখাতেন ইমাম। বলতেন, ‘তোমরা যদি এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলো তাহলে দুষ্টু জিন দিয়ে তোমাদের ক্ষতি করবো’। এভাবে অন্তত চার-পাঁচজন নারী তার লালসার শিকার হয়েছেন।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিজের খেদমতে থাকা খাদেমদের বলাৎকার করেছেন ওই ইমাম। এ যাবত ১০ জনেরও বেশি খাদেমের সঙ্গে এই কাজ করেছেন তিনি। এই ইমাম মসজিদের পাশে নিজের রুমে বসে সিগারেট পান করতেন। বলাৎকার করার ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। যাতে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে না পারে।
অনেকেই এ কারণে মসজিদের যেতে চাইত না। তখন ইদ্রিস তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে বলত, শিশুরা যদি মসজিদে না যায় তাহলে তাদের আমল নষ্ট হবে। এসব ছলচাতুরির মাধ্যমে তাদেরকে মসজিদে নিয়ে এসে বলাৎকার করতেন তিনি।’

এরইমধ্যে গ্রেফতারের পর ইদ্রিস আহম্মেদ নারীদের ধর্ষণ ও শিশুদের বলাৎকারের কথা র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইলে কুরুচিপূর্ণ ছবি, ভিডিওর প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও র‌্যাব জানায়।

র‍্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘মাদরাসায় যারা পড়ত তারা খুবই ছোট। অল্প বয়সে তারা খাদেম হয়। এসব শিশুদেরই তিনি বলাৎকার করতেন। যারা একবার তার ফাঁদে পড়েছে তারা বারবার এই ঘটনার শিকার হয়েছে। জিনের ভয় দেখিয়ে সে এসব শিশুদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কাজ করতেন। ১২ বছরের একটা শিশুকে আমরা পেয়েছি, যে কিনা গত ৪ বছর ধরে এই ইমামের লালসার শিকার।’


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর