প্লটের আবেদনের চিঠি ফাঁসে নাখোশ রুমিন ফারহানা
						নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার,২৫ আগস্ট ২০১৯:
সরকার ও সংসদকে ‘অবৈধ’ বলেও সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে সমালোচনার মুখে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। তবে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া আলোচিত এই নেত্রী তার আবেদনের চিঠি ফাঁস হওয়ায় নাখোশ হয়েছেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে এই সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে নেটের দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে বিষয়টি। এমনিতে সংসদ সদস্যরা নানা সুযোগ সুবিধা পান। রুমিন যা চেয়েছেন, সেটাও আইনবিরুদ্ধ নয়। যেহেতু তিনি সংসদকে বৈধ মনে করেন না, তাই তার সদস্য হয়ে এই আবেদন করাটি কতটা নৈতিক- সে প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকরা।

গত ৩ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন রুমিন ফারহানা। মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জানানো যাইতেছে যে, ঢাকাস্থ পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ১০ (দশ) কাঠা প্লট-এর প্রয়োজন। ঢাকা শহরে আমার কোনো জায়গা/ফ্ল্যাট, জমি নাই। ওকালতি ছাড়া আমার আর কোনো ব্যবসা/পেশা নাই। আমার নামে ১০ (দশ) কাঠা প্লট বরাদ্দের জন্য সুব্যবস্থা করে দিতে আপনার মর্জি হয়। এমতাবস্থায় আপনার নিকট আমার আবেদন, আমার নামে দশ (১০) কাঠা প্লট বরাদ্দ করলে আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’
আবেদনের এই চিঠি কীভাবে বাইরে এলো, সে প্রশ্ন তুলছেন রুমিন। বলেন, ‘কিন্তু আমি জানতাম না কোনো মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি এভাবে বের হয়। বিরোধী মতকে নগ্নভাবে তুলে ধরছে তারা।’
‘মন্ত্রী এমপি না হয়েও কেউ কেউ শুল্ক মুক্ত গাড়ি পেয়ে গেছেন। আমি তো এক সুতা জমিও পাইনি। তার আগেই আমার চিঠি ভাইরাল হয়েছে।’
এটা কোনো অবৈধ কাজ নয় জানিয়ে সংসদে বাকি যারা প্লট চেয়ে আবেদন করেছেন তাদের নামও প্রকাশের দাবি বিএনপি নেত্রী।
সরকারের কাছে আবেদন করার বিষয়ে বিএনপি নেত্রী বলছেন, ‘এটা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সুবিধা। এটা কোনো সরকারের কাছে চাওয়া না। রাষ্ট্রের কাছে চেয়েছি। রাষ্ট্রীয় পদের কারণে বেশ কিছু অধিকার হয়- গাড়ি, প্লট।’
অবশ্য সরকার প্লট দেবে না বলেও নিশ্চিত রুমিন ফারহানা। বলেন, ‘তবুও আনুষ্ঠানিকতার জন্য আবেদন করেছি।’
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি ফলাফল মানতে চায়নি। দল ও জোটের মোট আট জন জেতার পর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এরা কেউ শপথ নেবেন না। পরে তারা শপথ নেন। আর সংসদে আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত আসনের একটি পায় বিএনপি।
বিএনপি এই সংরক্ষিত আসনে দলের সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানারে মনোনয়ন দেয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই তিনি সংসদ সদস্য হন। গত ৯ জুন শপথের দুই দিন পর সংসদে যোগ দিয়েই উত্তাপ তৈরি করেন তিনি। সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি যে সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।’
সংসদ নিয়ে রুমিনের এমন মন্তব্যের পরও সদস্য হিসেবে প্লট চেয়ে আবেদন করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে নিয়ে বিএনপিতেই নানা মত আছে।
অবশ্য সরকারের বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে বাইরে তার সমালোচনা করা আর সংসদ সদস্য হিসেবে সুবিধা নেয়াকে এক করে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যে সুযোগ পাওয়ার প্লটের বিষয়টি এমনই। এটা তিনি আবেদন না করলেও পাবেন। এছাড়াও যেমন- ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি পাবেন, বিমানে চলাচলে ছাড় পাবেন। এমন আরো অনেক কিছু আছে। এটা নিয়ে সমালোচনা করার কিছু আছে বলে মনে করি না।’
এদিকে আবেদন করলেও প্লটের বিষয়ে কোনো তদবির করেননি জানিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য হিসেবে অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছি। তবে আমি ছোটটি নিয়েছি। সংসদ সদস্য হিসেবে কিছু সুবিধা এমনিতেই চলে আসে। আমার বাবার কিছু নেই। কোনো জায়গা নেই। আমার বাবা সারা জীবন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। কিন্তু বাবার যে অবস্থান ছিল, উনি একরের পর একর জমি ঢাকা শহরে করতে পারতেন। তাই এটুকু যদি না নিই তবে আমরা খাব কী। আমি আবেদন করার হকদার। এটি সরকারের প্লট নয়। এটি রাষ্ট্রীয়।’


												                                            





										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										
										