এসিডে ঝলসে দেয়া হলো সুবর্ণচরের সেই ধর্ষিতার স্বামীকে
 
						নোয়াখালী | সোমবার , ২৬ আগস্ট ২০১৯:
নৌকা প্রতীকে ভোট না দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর নোয়াখালী সুবর্ণচরে এক গৃহকর্মীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এই ঘটনার বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন ধর্ষিতার স্বামী সিএনজিচালক নাসির। 
বিচার তো দূরের কথা বিচার চাওয়ায় কাল হলো নাসিরের। দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার বিচার চাওয়ায় এবার এসিডে ঝলসে দেয়া হয়েছে নাসিরকে। রবিবার জেলা শহর মাইজদীতে মানববন্ধন করায় নাসিরের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে তার পুরো শরীর ঝলসে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা কেটে গেলেও জ্ঞান ফেরেনি তার।
এসিডদগ্ধ নাসিরের মা আরজান বেগম জানান, স্ত্রীর ধর্ষণের বিচার দাবিতে রবিবার (২৫ আগস্ট) নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন নাসির। মানববন্ধন শেষে মাকে নিয়ে চরবাগ্গা গেলে ধর্ষণ মামলার আসামি জয়নাল, রাসেল, জাকের, ফারুখ, মন্নানসহ কয়েকজন তাদের দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
এরপর রাত ৩টায় ধর্ষিতার স্বামী নাসির (৪২) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে তাকে এসিড নিক্ষেপ করে। এ সময় নাসিরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। রাত সাড়ে ৪টায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করা হয়।
ভর্তির ৯ ঘন্টা পর আজ সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত এসিড দগ্ধ নাসিরের জ্ঞান ফেরেনি। জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন ও ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, এসিডে নাসিরের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চরজব্বর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল বলেন, তিনি ঘটনা শুনেই হাসপাতালে গিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুহুল আমিরের নির্দেশে চরজুবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১০-১২ জন কর্মী রাত ১০টার দিকে সিরাজ মিয়া নামে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।
গৃহবধূর স্বামী সিএনজিচালক বলেন, ৩০ ডিসেম্বর তার স্ত্রী কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সোহেল, আলাউদ্দিন, স্বপন, আনিস, আনোয়ার, আবু মাঝি, হেদু মাঝিসহ কয়েকজন তাকে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে বলে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সবার সামনে তার স্ত্রী ধানের শীষে সিল দেয়।
ধর্ষিতার স্বামী আরও জানান, এরপর রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের সেসব কর্মী তার বাড়ি এসে পুলিশ পরিচয়ে দরজা খুলতে বলে। সিরাজ মিয়া দরজা খুললে ঘরে ঢুকে তারা সিরাজ মিয়া ও তার চার সন্তানের হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় এবং রাতভর গণধর্ষণ করে। পরের দিন সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে উলঙ্গ অবস্থায় ঘরের পাশে ফেলে যায়। এলাকাবাসী সকালে গৃহবধূকে উদ্ধার করে এবং অজ্ঞান অবস্থায় দুপুর সোয়া ১২টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।


 
												                                            





 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										