নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ও বিষণ্নতা সন্তানদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজের ছেলে-মেয়েরা কে-কি করছে সেদিকে প্রত্যেক অভিভাবককে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব ও বিষণ্নতা আমাদের সন্তানদের বিপথে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। জঙ্গিবাদের পথে না বাড়ায় সেজন্য আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে একাকীত্ব বিষণ্নতা থেকে বের করে বিভিন্ন কার্যক্রমে এনগেইজ করতে হবে। আমাদের দেশের যুবসমাজ অত্যন্ত মেধাবী। যাদেরকে নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, গর্ব করি। যাদের নিয়ে আমরা চিন্তা করি ২০৪০-২০৫০ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। সেই সন্তানরা যেন নষ্ট না হয়ে যায় না, বিলীন হয়ে না যায়, সেজন্য আমাদের করার অনেক কিছু আছে। সেদিকে প্রত্যেক অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।’
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (আইসিসিবি) আয়োজিত উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯-এর সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গি নির্মুলে বর্তমান বাংলাদেশ রোল মডেল পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণটা কি? আমরা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মুলোৎপাটনে সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এর ফলে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে চলে এসেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের পুলিশ র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আজকে সে কাজটি সুন্দরভাবে করছে বলে আমরা নিরাপদ জায়গাটাতে এসেছি।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাংলাদেশের মতো একটি শান্তিপ্রিয় দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আসবে এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস দেখুন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের জায়গা আমাদের দেশে ছিল না। হ্যাঁ যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে নানান সময়, নানান জাতি আমাদের দেশে এসেছে। কিন্তু এ উপত্যকায়, এই শান্তির দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের কাহিনী ছিল না।’
‘আমরা হঠাৎ করে দেখলাম, ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা, জাপানি নাগরিক যিনি কিনা বাংলাদেশের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তাকে হত্যা করা হলো। আমরা দেখলাম শিয়া মসজিদে ইমামকে হত্যা করার দৃশ্য। দেখলাম খ্রিস্টান দুই ধর্মযাজককে হত্যা প্রচেষ্টা। দেখলাম বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষু, পঞ্চগড়ে ইসকন মন্দিরে হত্যার দৃশ্যও। এগুলো যদি সব একত্রিত করেন, আমরা এনালাইসিস করে দেখেছি, প্রত্যেকটি ঘটনায় জড়িত ছিল দেশীয় সন্ত্রাসী। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সবগুলোই সন্ত্রাসীদের একত্রিত কর্মকাণ্ড।’
‘আমরা হলি আটিজানে ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হল। এই হত্যার দৃশ্য দেখার পরেই একটি ওয়েবসাইট থেকে বলা হলো, জড়িতরা একটি বিশেষ জায়গার সন্ত্রাসী। অথচ এই সন্ত্রাসীদের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নাই, বর্ডারে কোন সম্পর্ক নাই, তাইলে আসে কোত্থেকে?’
‘এমন সময়ই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ডাক দিলেন যে যেখানে আছেন ঘুরে দাঁড়াতে। মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, পেশাজীবী কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষিত যুবক বৃদ্ধ সবাই ডাকে সাড়া দিয়ে জানালেন কেউ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ চান না।’
‘মা তার ছেলেকে এই নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিচ্ছেন, বলছেন ছেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম কেন এই সন্ত্রাস, কেন এই জঙ্গিবাদের উত্থান বাংলাদেশ হচ্ছে? বাংলাদেশ তো কোনদিনই এই জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না, উৎসাহ দেয় না তাহলে কেন আসে? এক্ষেত্রে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেয়েছি।’
সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের কোনও মাদরাসায় জঙ্গিবাদ তৈরিতে সহযোগিতা করে না। করতে পারে না। কারণ ইসলাম কোনোদিন জঙ্গিদের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কথা বলে না। অন্যসব ধর্মের মানুষও হত্যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিরোধী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধর্মের প্রধানদেরকে নিয়ে ঢাকায় একটা সভা করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা প্রত্যেকে ডিভিশনে যাবো মানুষকে বোঝাবো বাংলাদেশে কোন ধর্মে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান নেই, কেউ যেন জঙ্গিবাদকে, সন্ত্রাসীদেরকে উৎসাহিত না করে। আমাদের দেশের জনগণ আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আর এটাই আমাদের ছিল মেকানিজম।’
পুলিশ-র্যাবসহ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মুল করত গিয়ে অনেক সদস্যই শাহাদাত বরণ করেছেন বলেও তিনি জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমি মনে করি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কার্যক্রম দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে আমরা সবাই মিলে কাজ করলেই এই জঙ্গিবাদকে আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।









