July 31, 2025, 9:22 pm

‘আল্লাহকে বলতাম- আল্লাহ, আমার একটা গতি করো’

Reporter Name 289 View
Update : Wednesday, July 8, 2020

লাইফস্টাইল ডেস্ক: সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসের ফলাফলে পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১১তম স্থান দখল করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী তাসনিমা ইফফাত তরী। কিন্তু তার এই ভ্রমণটা মোটেই সহজ ছিল না। বরং এতটাই কঠিন ছিল, যা নিয়ে রীতিমতো একটা গল্পের প্লট তৈরি হয়ে যেতে পারে। তরী নিজেই জানিয়েছেন নিজের অধ্যাবসায়ের সেই গল্প।

আমি সফল কেউ নই। অন্তত এখনও নই। তাই সফলতার গাঁথা আমাকে মানায় না। কিন্তু একটু নিজের মনটা হালকা করি। গত ৩ বছর আমি ফেসবুকে ছিলাম না। কারণ হীনমন্যতা। আমার চারপাশে সবাই কোথাও না কোথাও জয়েন করেছে। আমি বসে আছি। সারা দিন ডিপ্রেসড, ফ্রাস্ট্রেটেড থেকে কাটিয়েছি। সকালে উঠে পড়তে বসতাম। সেই পড়ার টেবিলে চোখের জল টপটপ করে পড়তো। বিসিএস ছাড়া কোথাও এপ্লাই করিনি। এই বিসিএসটা না হলে কী হবে আমার? আমার ৩টা বছর যে হারিয়ে যাচ্ছে!

এমন একটা রাত নেই যে কাঁদিনি বিশ্বাস করেন। আল্লাহকে বলতাম- ‘আল্লাহ আমার কপালে এতো কষ্ট কেন? আল্লাহ আমার একটা গতি করো’। আবার দিনের বেলা দরজা বন্ধ করে পড়তাম। শেষ দিকে ফ্রাস্ট্রেশনের চরম সীমায় পৌঁছে যাই। কারও সঙ্গে কথা বলতাম না। খাওয়া দাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলাম। খালি পড়তাম আর কিছু মনে নেই। মা আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদতো। রেজাল্ট দেয়ার দিন ভাবলাম ফেল করবো, কোথায় পালাই? তারপর রেজাল্ট দিলো। আমি তখন কোরআর শরীফ পড়ছিলাম। বাকিটা সবাই জানেন। আলহামদুলিল্লাহ।

আমাকে এক আত্মীয় বলেছিলেন- ‘না না ওর ফরেন হবে না। ওর দ্বারা সম্ভব না’। আর কত কী! কত মানুষের খোঁটা শুনেছি! কত কাছের মানুষের চেহারা পাল্টাতে দেখেছি! মা বলতো ‘তরী মুখে জবাব দিবো না, কর্মে জবাব দিবো। ইনশাল্লাহ তোমার দিন আসবে।’

এই কথাগুলো শেয়ার করলাম কারণ শুধু এটুকু বলার জন্য যে, আল্লাহ তার বান্দাদের অনেক কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা নেন। ধৈর্য খুব সুন্দর একটা জিনিস। আরেকটি কথা। আমার বাবা মায়ের কোনও ছেলে নেই দেখে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। আমার মা শুনিয়ে দিয়েছে তাদের ‘মেয়েদের কম ভাববেন না। মেয়েরাও মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।’

এবার কিছু কাজের কথা; কীভাবে পড়েছি। পয়েন্ট আকারে দিচ্ছি-

১) পুরাতন বছরের প্রশ্নগুলো প্রচুর এনালাইজ করতাম।
২) রিটেনের সময় খুব নোট করে গুছিয়ে পড়তাম।এতে খুব সুবিধা হতো রিভাইজ করতে।
৩) ড্যাটা, টেবিল, ডায়াগ্রামের জন্য আলাদা খাতা ছিলো। সোর্স সহ নোট করে ফেলতাম। এজন্য নেট সার্ফিং করতাম বেশি বেশি
৪) রিটেনের সময় হাত চালু রাখার জন্য প্রচুর লিখতাম ক্লকিং করে। সাড়ে ৩ মিনিটে এক পাতা এভাবে।
৫) গ্লোব কিনেছিলাম। চোখ বুলাতাম সবসময়। আন্তর্জাতিক এবং ভাইভার জন্য খুব খুব উপকারী

শেষ কথা, কারও স্ট্রেটেজির সাথে কারোরটা মিলে না। আপনারটা আপনি বানাবেন। কিন্তু পড়েন বেশি বেশি। পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

তাসনিমা ইফফাত (তরী)
পররাষ্ট্র ক্যাডার (৩৮তম বিসিএস এ সুপারিশপ্রাপ্ত)
মেধাক্রম: ১১
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর