September 14, 2025, 6:09 am

ফাঁকাই থাকছে শোলাকিয়া ঈদ মাঠ!

Reporter Name 120 View
Update : Tuesday, July 28, 2020

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা:
করোনা বদলে দিচ্ছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ২০০ বছরের ইতিহাস! ঈদুল ফিতরের পর এবার ঈদুল আজহার জামাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ১৯১ বছর আগে শুরু হয়েছিল ঈদের বড় জামাত। এরও দুশ’ বছর আগে থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর পর নানা প্রতিকূল সময় কেটেছে। কিন্তু ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয়নি।

সোমবার (২৮ জুলাই) কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট ভবনে ১৯৩তম ঈদুল আজহার প্রস্তুতি সভা শেষে এ তথ্য জানানো হয়। ঈদ উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এত্যি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ও মুসল্লিদের জীবন ঝুঁকি বিবেচনা করে ঈদের জামাত আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহত্তম জামাতে হিসাব অনুযায়ী, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯৩তম ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

কমিটির সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদগাহ কমিটির সভা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কমিটির সভাপতি হিসেবে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইতিহাস:
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তের বিস্তীর্ণ এলাকার নাম শোলাকিয়া। শোলাকিয়া মাঠ এলাকার পূর্ব নাম ছিল ইচ্ছাগঞ্জ। শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফি মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে এই স্থানে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে শোলাকিয়া মাঠের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তীতে হয়বতনগরের শেষ জমিদার দেওয়ান মোহাম্মদ মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের নামে ২ একর ৩৫ শতক জমি দান করেন। দলিল অনুযায়ী ওই সময়ের ২শ বছর আগে থেকেই এ ঈদগাহে দু’টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। সৈয়দ আহাম্মদ সাহেবের পর উত্তরাধিকারসূত্রে হয়বতনগর জমিদার বাড়ির তৎকালীন জমিদার সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ ১৮২৯ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্তু শোলাকিয়া মাঠের ইমাম ছাড়াও ঈদগাহের সর্বপ্রথম মোতাওয়াল্লি ছিলেন। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে হয়বতনগর জমিদার পরিবার থেকে মোতাওয়াল্লি ও তাদের সিদ্ধান্ত মতে ইমাম নিযুক্ত করা হতো। বর্তমান জেলা প্রশাসক মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন:
বর্তমানে খাস জমি নিয়ে প্রায় ৭ একর জমি রয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। ঈদগাহের চারপাশে প্রাচীর ঘেরা মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে। প্রতিটি কাতারে প্রায় ৪০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। সে হিসাবে মাঠের ভেতরে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মাঠের আশপাশের রাস্তা ও বাড়িঘরসহ প্রায় দুই লক্ষাধিক মুসল্লির বেশি নামাজ আদায় করে থাকেন।

শোলাকিয়া নামকরণের ইতিহাস:
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক ঈদগাহের সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।একটি জনশ্রুতিতে জানা গেছে, বহুকাল আগে একবার এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমান শোলাকিয়ার নামকরণ হয়েছে।

অন্য জনশ্রুতিতে জানা গেছে, আজকের মৃতপ্রায় নরসুন্দা নদীটি এককালে ছিল সুগভীর আর বেগবতী। নদীটিতে নিয়মিত বড় বড় নৌযান চলাচল করতো এবং মোঘল শাসনামলে বন্দরটি এই অঞ্চলের বিখ্যাত নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল। একবার বন্দরটিতে সন্নাসীদের ১৬টি লবণ বোঝাই নৌযান এসে নোঙ্গর করেছিল। এর ফলে উক্ত লবণ বোঝাই নৌযান থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে শুল্ক আদায় করেছিল, সে থেকে উক্ত এলাকাটি উচ্চারণ বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে শুল্ক থেকে শোলাকিয়া নাম প্রচলিত হয়েছিল।

জানা গেছে, ব্রিটিশ, পাকিস্তুান ও বর্তমান বাংলাদেশ আমলের গোড়ার দিকেও এ দেশের প্রত্যন্ত জেলাসমূহ ছাড়াও সুদুর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য আসাম, পাকিস্তান, ভূটান, ইরান, নেপাল, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানগণ শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাতে শরীক হতেন।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর