‘৪০ বছরের বন্ধ করিনি পত্রিকা বিলি’

প্রাকৃতিক দূর্যোগ কালবৈশাখী ঝড় সিড়র, আইলা, নারর্গিস, ফণী, অতি বৃষ্টি, অনা বৃষ্টিতে কোন সময়ও ঘরে বসে থাকি নাই। এক্সিডেন্টে পা ভেঙ্গেছিল যখন তখনও ভ্যান গাড়ীতে বসে পত্রিকা বিলি করেছি, তবুও ৪০ বছরের হকারী জীবনে একদিনও পত্রিকা বিলি বন্ধ করি নাই। এমনকি যেইদিন মা-বাবা মারা গেছে ওইদিনও পত্রিকা নিয়ে বের হয়েছি। আজও তাই করছি।
কথাগুলো বলেন মুরাদনগর উপজেলার প্রবীণ হকার সুভাস চন্দ্র সাহা। সুভাস ১৯৮১ সালে পত্রিকা বিক্রির কাজ নেন। তখন সে ১৮ বছরের টকবগে যুবক। এখন বয়স ষাটের কোঠায়। এখনো প্রতিদিন পত্রিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান মানুষের দ্বারে দ্বারে। এই পেশাই তার জীবনের সবকিছু। সংসারের ভরন-পোষন, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে-সাদি, পূজা-অর্চনা ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান সব কিছু এই একটা পেশায় চলে। তাই অসুস্থ হলেও ঘরে বসে থাকতে পারেন না। করোনা সংক্রমনের কারনে অনেকে গ্রাহক কমে গেছে। তারপরও জীবিকার তাগিদ আর পেশাগত দায়িত্ব হিসাবে প্রতিদিন পত্রিকা নিয়ে ছুটেন ।
সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ১.৪০(এক টাকা চল্লিশ পয়সা) থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করি। তখন ঢাকা-সিলেট সরাসরি বিশ্বরোড ছিলনা। ঢাকা- সিলেটের গাড়ী কোম্পানীগঞ্জ হয়ে আসত বিধায় ওই গাড়ীতে পত্রিকা দিয়ে দিত। পত্রিকা পেতে পেতে বিকাল হতো। এখনকার মত এত পত্রিকা ছিলনা শুরুতে ইত্তেফাক, বাংলার বানী, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক সংগ্রাম এই পত্রিকাগুলো আসত। তারপর ইনকিলাব, জনকন্ঠসহ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পত্রিকা গুলো এই দিকে আসতে থাকে। কুমিল্লার স্থানীয় পত্রিকা বলতে সাপ্তাহিক আমোদ মাঝে মধ্যে পাওয়া যেত।
বর্তমানে কুমিল্লা থেকে কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা মুরাদনগর উপজেলায় আসে। নিয়মিত ছাপা হয়ে এই উপজেলায় আসে বিধায় কিছু গ্রাহক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিভিন্ন পত্রিকা আসলেও হাতে হাতে মোবাইল ইন্টারনেটের কারনে পত্রিকার চাহিদা কমে গেছে। তাই আমার বিক্রিও কম। আমি এই পেশায় আসার ১০ বছর পর আমার বড় দাদা নিতাই চন্দ্রসাহাকে নিয়ে আসি। নিতাই দাদা ৩০ বছর যাবত মুরাদনগর উপজেলা সদরে পত্রিকা বিলির কাজ করেন। উপজেলায় আরো কিছ খুচরা হকার আছে যারা আমার কাছ থেকে পত্রিকা নেয়। এখন পত্রিকা বিক্রি কম হওয়ায় ছেলে মেয়ে নিয়ে চলতে কষ্ট হয়।
আমার তিন মেয়ে এক ছেলে দুই মেয়েকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ানোর পর বিয়ে দিয়ে দেই। একটি মেয়ে বিয়ের বাকী আছে, সে কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে পড়ে। ছেলেটা সবার ছোট সে প্রতিবন্ধী, ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে। চোখে সমস্যা, ডান হাত অচেতন, বাম হাতে লিখে বাম হাতে খাবার খায়। তার প্রতিন্ধী কার্ডের আবেদন করেছি।
হকার সুভাস জানান, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান। বর্তমানে তিনি কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পুরাতন স্টেশনের প্রভাতী কাউন্টারের সামনে বসেন। বৃষ্টি আসলে ওখানেই কাগজ মুড়িয়ে পত্রিকা ঢেকে রাখেন। কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পাশে জেলা পরিষদের জায়গা সহ কিছু সরকারী জায়গা আছে। এগুলোর মধ্যে একটি পত্রিকা বিক্রির স্টল হলে সেখানে পত্রিকা গুলো নিরাপদ থাকত।
এ ব্যাপারে তিনি মুরাদনগরের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লা হারুন (এফসিএ) এমপি মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।