September 13, 2025, 5:24 am

করোনায় বন্ধ স্কুল, কর্মে ঝুঁকেছে কুড়িগ্রামের গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা

Reporter Name 139 View
Update : Saturday, May 22, 2021

দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় লেখাপড়া ছেড়ে বিভিন্ন কাজের প্রতি ঝুঁকছে গ্রামঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবাররের শিক্ষার্থীরাই শিশুশ্রমের বেশি শিকার হচ্ছে। অভিভাবকদের অভিযোগ দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে তারা লেখাপড়া করতে চায় না। অযাথা বাড়িতে বসে থাকার চাইতে ছেলেদের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে। তার সংসারে কিছুটা যোগান দিচ্ছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ বিভিন্ন জেলার ইটখোলা, ধানকাটা শ্রমিকের কাজ করছে। স্থানীয়ভাবে কৃষি শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক এবং অটোরিকশা চালানোর কাজে যোগ দিয়েছে।

উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ইন্দ্রগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষর্থী লিটন মিয়া ব্যাটারি চালিত অটো চালানোর কাজে যোগ দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজে ন্যাস্ত থাকে সে। লিটন মিয়া জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় সে এই কাজে নেমেছে। অর্থ উপার্জন করে সে পরিবার চালাতে অর্থ জোগান দেয়।

কচাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয় কৃষ্ণ অটোরিকশা চালিয়ে নিজের খরচ ও সংসারের খরচ চালাচ্ছে। জয় জানায়, লেখাপড়া একরকম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তাই সে রিকশা চালানার কাজে যোগ দিয়েছে। সে জানায়, তার বন্ধুরাও বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। কেউ কেউ ঢাকার ইট খোলায় কাজে গেছে।

গোলেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুস্তাকিম বিল্লাহ লেখাপড়া ছেড়ে সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোয় ব্যস্ত থাকে। কেদার ইউনিয়নের সুবলপাড়ের ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাসুদ এখন চায়ের দোকানে কাজ করে।

অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিজেদের কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে নিয়ে যায়। তাদের ধারণা বিদ্যালয় খোলা সময় সাপেক্ষ তাই পারিবারিক কাজকর্মে নিযুক্ত করছে তাদের। লেখাপড়া না হলেও সংসারের কাজ করে খেতে পারবে তারা।

কেদার ইউনিয়নের সাতানা গ্রামের রহমত উল্লা জানান, তার সন্তান কচাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করত। এখন কৃষিকাজে ন্যস্ত রেখেছেন তিনি। একসাথে খেতখামারে কাজে নিয়ে যান তিনি। তিনি জানান, টিউশনি দিয়ে ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ নেই তার। তাই ছেলেকে বসিয়ে না রেখে কাজে নিযুক্ত করেছেন।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে বলে শিক্ষকদের অভিমত। কচাকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান ইসলাম জানান, পড়াশোনার ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল খোলার পর এসব শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরিয়ে আনা দুরূহ ব্যাপার হবে।

একই অভিমত ব্যাক্ত করে নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়ার সহ-সভাপতি ও সুবলপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সফিক সরকার জানান, এলাকার বেশিরভাগ অভিভাবক দরিদ্র ও অসেচতন হওয়ায় করোনাকালীন সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের কাজে নিয়োজিত করেছেন। এছাড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর