সাতক্ষীরায় ‘ইয়াশ’ মোকাবিলায় প্রস্তুত আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল টিম

সাতক্ষীরা ও শ্যামনগরে উপকূলে আগামীকাল বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ আঘাত হানতে পারে। প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় ১৪৫টি সাইক্লোন শেল্টারসহ মোট ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয়কেদ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ও শতাধিক মেডিকেল টিম। মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত নৌযান, যানবাহন ও উদ্ধার সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বাবলু রেজা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছর একই সংখ্যক অশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। একই সঙ্গে সাত উপজেলার প্রতি উপজেলায় ৫টি ও ৭৮টি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলে ৪৩টি পয়েন্টে নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আগমনী বার্তায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে হতাশায় হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এসব জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূল। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ৫০টির বেশি গ্রাম। বিধ্বস্ত হয় অর্ধ লক্ষাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা মৎস্য ও কৃষিসম্পদ। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বছর পেরিয়ে গেলেও জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। লেবুবুনিয়া, দূর্গাবাটি, আশাশুনি উপজেলা সদরের দয়াঘাট, প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের একাধিক পয়েন্টে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বলছেন, আম্পানে ভেঙে যাওয়া অধিকাংশ বাঁধের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজ চলমান আছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ঝড়ের সময় জোয়ারের পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধি না পেলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে অতিরিক্ত পানির চাপ থাকলে কিছু পয়েন্ট ভেঙে প্লাবিত হতে পারে। আমরা সেই পয়েন্টগুলো জরুরিভাবে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যাপ্ত জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কোনো স্থানে বাঁধ ভেঙে গেলে তাৎক্ষণিক সেটা মেরামত করা যায়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টিতে যেন কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে সব ধরনের চেষ্টা ও প্রস্তুতি থাকবে।