August 4, 2025, 5:15 pm

‘প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে’ নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট- 174 View
Update : Sunday, May 22, 2022

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে হত্যা করেন গিয়াসউদ্দিন শেখ নামে এক রংমিস্ত্রি। প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট ও ছুরি দিয়ে তাদের হত্যা করেন।

নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে গিয়াসউদ্দিন দাবি করছিলেন, তিনি খবর পেয়ে গাজীপুর থেকে এসেছেন। তার ফোন ট্র্যাক করে আমরা জানতে পারি তিনি গাজীপুর নয়, এই অঞ্চলেই ছিলেন। পরে তাকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে নিলে এই হত্যায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন।’

এর আগে বেলা পৌনে ৩টায় উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রাম থেকে ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, ‘বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামে রোববার সকাল ৮টার দিকে দুটি মাটির ঘরে তাদের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পায় পুলিশ। নিহতরা হলেন ৩৫ বছরের রহিমা বেগম, তার ১২ বছরের ছেলে রাব্বি শেখ ও সাত বছরের মেয়ে রাকিবা শেখ।’

নিহত রহিমার জা ফরিদা বেগম জানান, তার ভাসুর গিয়াসউদ্দিন শনিবার বিকেলে গাজীপুরে কাজ করতে যান। রহিমা বেগম তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে রাতে বাড়িতে একা ছিলেন। রহিমা বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন।

শরীফা আক্তার নামে এক প্রতিবেশী রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কাপড় নিতে রহিমাদের বাড়ি আসেন। এসে বাড়ির পশ্চিম পাশের মাটির ঘরের মেঝেতে রহিমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এই বাড়ির দক্ষিণ পাশে অন্য একটি মাটির ঘরে দেখেন চৌকির ওপর দুই সন্তানের দেহ। তার কান্নাকাটি শুনে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেন।

ফরিদা বেগমসহ নিহত রহিমার মা, বোন ও স্থানীয়রা জানান, গিয়াসউদ্দিন শেখের বাড়ির চারদিকেই জমি রয়েছে রেনু মিয়ার। একাধিকবার গিয়াসকে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে রেনু মিয়ার পক্ষ থেকে, কিন্তু একমাত্র ভিটেমাটি বিক্রি করতে নারাজ ছিলেন রহিমা।

তারা আরও বলেন, গিয়াসের বাড়ির আঙিনাসহ রেনুর জায়গা দিয়েই গিয়াসদের চলাচল করতে হয়। এ নিয়ে রেনুর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে গিয়াস বিক্রির জন্য তার বাড়ির কিছু গাছ কাটেন। এই গাছ রেনুর জায়গা দিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে রেনু বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

রহিমার ভাই মোশাররফ বলেন, ‘আমার বোন রহিমা কাপড় সেলাইয়ের দর্জি কাজ করত বাড়িতে। রাব্বি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র ও রাকিবা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। দুলাভাইয়ের (গিয়াস) সঙ্গে প্রতিবেশী রেনু মিয়ার বিরোধ ছিল। তাদের ঝগড়ার খবরও শুনেছি।

‘রোববার সকালে আমার বোনসহ তার সন্তানদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না।’

দোষ স্বীকার গিয়াসের:
পুলিশ সুপার এনায়েত বলেন, ‘গিয়াস নিজেই হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছুরি বাড়ির পাশের নদী থেকে জব্দ করেছি। এ ছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত ক্রিকেট খেলার ব্যাট বাগান থেকে জব্দ করা হয়েছে।

‘গিয়াসের প্রতিবেশী রেনু মিয়ার সঙ্গে বিরোধ ছিল। তাকে ফাঁসাতে শনিবার দিবাগত রাতে হত্যাকাণ্ড ঘটান। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেন। এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ সম্পৃক্ত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর