জাল জালিয়াতি করে জমি দখলে নেয়ার অভিযোগ সাবেক মেম্বারের বিরুদ্ধে

চাঁদাবাজি,চুরি- ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে অন্যের জমি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে জাল জালিয়াতি করে তৈরি কাগজ পত্রের বৈধতা দেখাতে বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
সরেজমিন, রমজান আলীসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী দাবী করে বলেন, সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা রাতের আধারে অন্যের জমি বা প্লটে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমিটি প্রথমে দখলে নেন। পরে জমির মালিক প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। নয়তো তারা দখল ছাড়বে না বলে জানান, আর এই চক্রের মুলহোতা হলেন সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার লাল মিয়া, তার ছেলে সাইদুল, মেয়ের জামাই জামায়াত নেতা মনির, তাদের অপরাধ চক্রের সাথে রয়েছে প্রায় ৪০-৫০ জনের সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং বাহিনী। যাদের কাজ হলো লাঠিসোটা নিয়ে অপরাধীদের সঙ্গ দেয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০০ সালের আগে ও পরে যারা তুরাগে এবং উত্তরার তৃতীয় প্রকল্পের প্লট কিনেছেন তাদের অনেক মালিক ভয়ে জমিতে আসতে পারছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্রের সদস্যদের ভয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে অনেক জমির মালিক। তারা শুধু জমি দখল নয় জমি দখলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিতেও পিছপা হয় না। এমন অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগির। সম্পদ হারিয়ে ও মিথ্যে মামলায় আদালতের বারান্দায় ঘুরছে অনেক।
এমনই এক ভুক্তভোগী রমজান আলি তিনি বলেন, আমার বাবার মৃত্যু হয় ১৯৮০ সালে, বাবা মারা যাওয়ার পর আমার পৈতিক সম্পত্তি দখলে নিয়ে নেন আমারই চাচা ভাই সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার লুৎফর রহমান লাল মিয়া, বাবা মারা যাওয়ার পর জানতে পারি আমার বাবার দিয়াবাড়ি মৌজায় এবং নলভোগ মৌজায় নয় একর তিরানব্বই শতাংশ জমি ছিলো যা দখলে নিয়ে ২০ জন ব্যাক্তির নিকট মালিকানা বদল করেছেন।
তিনি বলেন, জমি দাবি করতে গেলে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৮ মাস জেল খাঠান লুৎফর রহমান লাল মিয়া। এছাড়াও এক বিচারপতির বাড়ির ডাকাতি মামলায় ফাঁসান লাল মিয়া মেম্বার। জেল থেকে বেড় হয়ে নেতাদের দারে দারে ঘুরেছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। বিএনপি সরকারের আমলে কিছু পুলিশ সদস্যদের সাথে যোগসাজশ করে আমাকে মিথ্য মামলায় ফাঁসানো হত।
জমি ফেরত চাইতে গেলে লাল মিয়া বলেন, তোর কোন সম্পত্তি এখানে নাই। তোর বাবা সব জমি আমার নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। জমি দখলে রাখতে আমাকে কয়েক বার মিথ্যা ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মামলাসহ তার পরিবারের উপর হামলা চালানোর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে।
রমজান আলী বলেন, দিয়াবাড়ী মৌজার তিন একর নলভোগ মৌজার নয় একর তিরানব্বই শতাংশ সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায়। এছাড়াও নলভোগ মৌজার জমি গুলোও নিতে চেয়েছিলো। পরে আমি নলভোগ মৌজার সম্পত্তি পেতে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করি এবং দীর্ঘ ২৫ বছর মামলা চালিয়ে নলভোগ মৌজার ৩১ শতাংশ জমি কোর্টের মাধ্যমে বুঝে পাই। এখন পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার সবাই জানে লাল মিয়া,কিভাবে অন্যের সম্পত্তি বিএনপির ক্ষমতা দেখিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দখল করেছে। তারা জানান, রমজান আলী পৈতিক সম্পত্তি ফিরে পেতে দীর্ঘ দিন থেকে আদালতে দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অপরএক ভুক্তভোগি মো. সেলিম জানান, দিয়াবাড়ি বটতলা গোলচত্তর এলাকায় আমার সাড়ে চার কাটার একটি প্লট লাল মিয়া মেম্বার ও তার ছেলে সাইদুল রাতারাতি দখলে নিয়ে রেস্তোরাঁ তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে। এবং ভুয়া জাল কাগজপত্র বানিয়ে নিজের জমি বলে দাবি করছেন। এ বিষয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করেছি আমি। নিজের জায়গায় গেলেই তারা ৪০-৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়।
তিনি আরো বলেন, এবিষয়ে তুরাগ থানায় গিয়ে কোন বিচার পাইনি। যে অফিসার আসে লাল মিয়া ও তার ছেলে সাইদুল রহমানের টাকা খেয়ে চুপ হয়ে যায়। কোন তদন্ত করে না পুলিশ । তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ উল্টা পাল্টা কথা বলেন। আমার জায়গা ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা। আবার জাল দলিল করে নিজের নামেও করে নিয়েছে এমন ঘটনাও রয়েছে অনেক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, এদের অত্যাচারে নিজের জমি হারিয়ে বিচার না পেয়ে লিল মিয়া নামের এক ব্যক্তির মারা গেছেন। লিল মিয়ার রাজউকের একটি প্লট দখল করে নিয়ে নেন লাল মিয়া ও তার ছেলে সাইদুলের সন্ত্রাসী বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবা- ছেলে মিলে আমিরুল ইসলাম এবং জেসমিস আক্তারের উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প একোয়ার হওয়ার পর অ্যাওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত প্লট দখল করে রেখেছে বলে জানা গেছে।
এই জমি দখলের কৌশল সম্পর্কে জানা গেছে, বাবা- ছেলে মিলে আমিরুল এবং জেসমিন প্লটটি পাওয়ার পর লাল মিয়া তাদের ভুল বাল বুঝিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্লটটির এওয়ার্ডের ৭৫ হাজার টাকা ও ৫০০ টাকার দুইটি ব্যাংক রিসিট নেন। এসময় বাবা- ছেলে তাদের বলেন, জমি বিক্রি করে আরো কিছু টাকা দিবেন। কিন্তু তার কিছুদিন পর ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে আব্দুর রাজ্জাক নামের একজনের নিকট স্ট্যাম্প করে লাল মিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। সেখানে দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন লাল মিয়া মেম্বার নিজেই। তার কিছুদিন পর প্রতারনা করার লক্ষে জমিটির মুল মালিক আমিরুল এবং জেসমিনের নিকট কাগজ হারিয়েছে বলে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে একটি পাওয়ার দলিল করে নেন লাল মিয়া।
আমিরুল এবং জেসমিনের কাছ থেকে আব্দুর রাজ্জাক প্লটটি ক্রয় করে রাজউকের সমস্ত কিস্তিও পরিশোধ করেন আব্দুর রাজ্জাক আবার রফিকুল ইসলাম নামের অপর এক ব্যাক্তির কাছে তা বিক্রি করেন। রফিকুল ইসলাম জমিটি ক্রয় করে জমিতে গেলে দেখতে পান লাল মিয়া ও তার ছেলে সাইদুল, মেয়ের জামাই মনির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্লটটি দখল করে রেখেছেন। পরে রফিকুল ইসলাম জমিটির দখল উচ্ছেদ করতে না পেরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম স্বপন এর কাছে প্লটটির সকল কাগজপত্র বিক্রি করেন। শফিকুল ইসলাম স্বপন রেজিষ্ট্রি করতে গেলে দেখতে পান লাল মিয়া ও তার ছেলে সাইদুল রহমান প্লটটি নিজের দাবি করে একটি পাওয়ার দলিল জমা দিয়েছেন রাজউকে।
এবিষয়ে জমির মুল মালিক আমিরুল ইসলাম জানান, আমি এবং আমার শালীকা জেসমিন লাল মিয়াকে কোন পাওয়ার দেই নাই। সে আমার কাছ থেকে জমিটি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে অ্যাওয়ার্ডের কাগজপত্র নিয়ে যান। তখন তিনি ৭৫ হাজার টাকার এবং ৫০০ টাকার দুইটা ব্যাংক স্লিপ নেন। কাগজ নেয়ার সময় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন পরে আরো টাকা দিবেন বলে জানান কিন্তু আর কোন টাকা পয়সা দেয় নাই লাল মিয়া। বাবা-ছেলে প্রতারণা করে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তির কাছে জমিটি বিক্রি করে। আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেন।
কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির কাগজপত্র উঠাতে আপনাদের স্বাক্ষর প্রয়োজন আব্দুর রাজ্জাককে যখন জমি বিক্রি করে সে কাগজে লাল মিয়া নিজেও ২নং সাক্ষী হিসেবে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের কোনো টাকা-পয়সা তিনি আর দেননি। হঠাৎ একদিন এসে বলেন, কাগজপত্র হারিয়ে গেছে তোমাদের একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে। কাগজ উঠিয়ে আমাদেরকে টাকা দেওয়া হবে। তার কথা মত আমরা আবার স্বাক্ষর করি। বুঝতে পারিনি যে সে এভাবে প্রতারণা করবে।
বর্তমানে প্লটটির মালিক দাবী করা ৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, প্লট রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে দেখি লাল মিয়া ও তার ছেলে সাইদুর রহমান রাজউকে একটি পাওয়ার দলিল জমা দিয়েছে।
কি কাগজপত্রের বলে জমা দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের জমি বলে দাবি করেন। কিন্তু কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি পরবর্তীতে আমি প্লটটির দখল থেকে সরে যেতে বললে আমার কাছে সাইদুল রহমান এক কোটি টাকা দাবি করেন। নয়তো প্লটটি দখল ছাড়বেন না। পরে আমি ক্রয় কৃত প্লটটিতে যেতে না পেরে উত্তরা র্যাব- ১ বরাবর লাল মিয়া, সাইদুল রহমানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে লাল মিয়ার ছেলে সাইদুল রহমান বলেন, তারা যা অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা যে মালিক তার সব দলিলপত্র রয়েছে। হয়রানি করতে এমন মিথ্যা অভিযোগ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, আমাদের আসল দলিল পত্র হারিয়ে গেছে। সে জন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। যা আমাদের কাছে আছে। এইটা বলেই তিনিও জমির মালিকানা দাবী করেন।
More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর