August 9, 2025, 8:43 pm

ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই নৌকাবাইচে অংশ নেন প্রতিযোগীরা

Reporter Name 217 View
Update : Tuesday, September 12, 2023

পাবনায় শুরু হয়েছে দশ দিনব্যাপী আবহমান বাংলার ঐহিত্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ‘স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড’-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড রুচির নিবেদনে প্রতিবারের মতো এবারও পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোড়রী গ্রামের চিকনাই নদীতে শুরু হয়েছে এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।

আটঘরিয়ার পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতনের সভাপতিত্বে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ও উদ্বোধক হিসেবে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত থেকে এ মেলার উদ্বোধন করেন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকাবাইচের সময় মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়ে একই লয়ে গান গাইতে আরম্ভ করে এবং সেই গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানে বাইচারা। যার ফলে কোনো বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে একসঙ্গে পানিতে অভিঘাত সৃষ্টি করতে থাকে। গায়েন বা পরিচালক কাঁসির শব্দে এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজনমতো কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে গানের গতিও বেড়ে চলে। এমনই প্রতিযোগিতায় মেতেছে পাবনার আটঘরিয়ার চিকনাই নদীতে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিশটি নৌকা।

এসব নৌকার মাঝি ও বাইচাসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শুধু পুরস্কার জিততেই নয়, প্রাচীন এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই তারা এধরণের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তবে প্রত্যেকেই চেষ্টা করেন বিজয় সুনিশ্চিত করতে।’

এ ব্যাপারে কথা হয় এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নিউ শেরে বাংলা নৌকার মাঝির সাথে। এ প্রতিযোগিতায় একাধিকবার বিজয়ীর পুরস্কার অর্জন করেছেন। এ নৌকার মাঝি রায়হান খাঁ জানান, এখানে যারা আছে তারা অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। সারাবছর কাজের ব্যস্ততা শেষে তারা এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কয়েকদিন আগে থেকে টুকটাক রেওয়াজও করেন। নিজেদের সামর্থ্য যাচাই করতে অংশ নেন বাইচ প্রতিযোগিতায়। এ অংশ নেওয়াটা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য, পুরস্কার অর্জন এখান মুখ্য বিষয় নয়।

নৌকার পরিচালক ফরিদ সরকার জানান, নৌকা তৈরি ও ঠিক রাখতে যে খরচ হয় তা এই পুরস্কার দিয়ে কোনোভাবেই উঠা সম্ভব নয়। তবুও আমরা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। তার একমাত্র কারণ নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা। তাছাড়া এই প্রতিযোগিতাটিকে আমরা দারুণভাবে উপভোগ করি।

চান্দাই জনতা এক্সপ্রেসের মাঝি আবু সাঈদ জানান, প্রতিবছর আমরা নৌকা সাজিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। পুরো জেলা ও জেলার বাইরে থেকে হাজারো মানুষ আসে এই বাইচ দেখতে। দেখে তারা যেমন আনন্দ পায় আমরাও প্রচুর আনন্দ পাই। আশা করছি এবার আমরা প্রথম পুরস্কারটা নিবো।

এ নৌকাবাইচ দেখতে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রতিদিন চিকনাই নদীর পাড়ে জড়ো হন অসংখ্য মানুষ। বাইচ চলাকালে এ এলাকায় দেখা দেয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এতেই সার্থকতা দেখছেন নৌকাবাইচের আয়োজকরা। এব্যাপারে এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজক কমিটির প্রধান আটঘরিয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন জানান, নদীতে পানি সংকটসহ নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও স্কয়ারের সহযোগিতায় আমরা প্রতিবারই এ বাইচের আয়োজন করে থাকি। হাজারো মানুষ হাসি মুখে বাইচ দেখতে আসছেন। একে কেন্দ্র করে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। এছায়ে বাইচের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য উজ্জীবিত হচ্ছে- এটুকুই আমাদের সার্থকতা। চেষ্টা করছি ভবিষ্যতেও এটি টিকিয়ে রাখতে।

উল্লেখ্য, গত ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বর্ষায় গোড়রী গ্রামে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। সারাবছর পানি না থাকলেও বর্ষায় চিকনাই নদীতে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় এ সময় এখানে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। স্কয়ার গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতায় এ বছর অংশ নিয়েছে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ২০টি নৌকা ও বাইচ দল।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর