ইতিহাসের নামে আর কোনো গল্প দেখতে চাই না: জামায়াতের আমির

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: খবরের কাগজ
‘ইতিহাসের নামে আমরা আর কোনো গল্প দেখতে চাই না, সঠিক ইতিহাসটা উঠে আসুক’- বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে যার যেখানে জায়গা রয়েছে, সেটা অবশ্যই দিতে হবে। আপনার ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক, এরই নাম ইতিহাস। যদি ভালো লাগার মানুষকে সামনে নিয়ে আসেন, আর ভালো না লাগার মানুষকে যদি ফেলে দেন; এটা ইতিহাস নয়, এটা হবে গল্প।’
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদদের কথা স্মরণ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা ইতিহাস রচনা করেছেন। নিজেদের জীবন দান করেছেন। তাদের কারও মা জীবিত নেই। তাদের পরিবারের সদস্যরা অনেকে কষ্টে আছেন। এই রাষ্ট্রের কি এতই অভাব পড়েছে যে তাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লজ্জিত। আমরা রাজনীতি করি, কিন্তু দায়িত্ব পালন করি না। এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের, জনগণ রাষ্ট্র চালায় না। সরকার রাষ্ট্র চালায়। যুগ যুগ ধরে যারা সরকারে ছিলেন, তাদের অবহেলা, উপেক্ষা এবং অপরাজনীতির দায় তাদের নিতেই হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা যত দিন আছেন, অনুরোধ করব ইতিহাসের এই অচলায়তন ভেঙে ফেলুন। সম্মানের সঙ্গে তাদের (ভাষা শহিদদের পরিবার) কাছে যান, পরিবারগুলোকে সম্মানিত করুন।’
বিগত সরকার এই জাতির প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের সঙ্গে শুধুমাত্র তাদের গোষ্ঠী ছাড়া জুলুম করেছে বলে অভিযোগ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই জুলুমের শিকার ছিল জামায়াতে ইসলামীও। এরপর পর্যায়ক্রমে সবার ওপরে এসেছে, কেউ বাদ যাননি। এই চ্যাপ্টারের অবসানের পর এখন আবার কারও ওপর জুলুম হোক, এটা কি জাতি মেনে নেবে?’ আমরা রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যদি খেলেন, তাহলে আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না। এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া না হলে স্বেচ্ছায় জেলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জমায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দীন প্রমূখ।
আগস্ট বিপ্লবের পর আজও বৈষম্য দূর হয়নি
ভাষা আন্দোলন আমাদের জন্য গর্বের এবং প্রেরণার উৎস বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে সহকারী সেক্রেটারি এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতি নতুন দিশা পেলেও দেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি। সব রাজবন্দী মুক্তি লাভ করলেও অসুস্থ এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। অবিলম্বে এটিএম আজহারুলের নিঃশর্ত মুক্তি, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনের কাউন্সিল হলে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমূখ।