ট্রেন উঠলেই মরচে ধরা ব্রিজ দুটি কাঁপতে থাকে
 
						শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ :
ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের ২টি রেল ব্রিজ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেড় মাস আগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের বঙ্কিরোট এলাকার ২৮নং ও কয়ড়া ইউনিয়নের মহিষাখোলা কামারপাড়া এলাকার ২৯নং রেল ব্রিজের গার্ডারে ফাটল ও লোহার পাতে মরচে ধরে ক্ষয় হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এ রেল ব্রিজ দুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ধীরগতিতে থেমে থেমে চলছে ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ প্রায় ১৪টি আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেন। এছাড়াও এই পথে তেল, কয়লা ও মালবাহী ৬টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। 
সূত্র জানায়, সবগুলো ট্রেনই এখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। গত দেড় মাস হলো এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট রেল কর্তৃপক্ষ বর্ষার অজুহাতে মেরামত কাজ না করে সেতুর নিচে ঠেকনা দিয়ে ট্রেন চলাচল চালু রেখেছে। এখন বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত কয়ড়া ইউনিয়নের মহিষাখোলা কামারপাড়া ব্রিজ ঘুরে দেখা যায়, ব্রিজের গার্ডারে বেশ কয়েকটি জায়গাতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে রেল বিভাগ ওই ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজের নিচে লোহার অ্যাঙ্গেল ও কাঠের স্লিপারের ঠেকনা দিয়ে কোনমতে কাজ চালাচ্ছে। এছাড়া দুই ব্রিজের দুই পাশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সেখানে রেল বিভাগ থেকে দুইজন ওয়েম্যানও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়েম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, পালাক্রমে এক সপ্তাহ করে তিনি ও জাহাঙ্গীর আলম নামের অপরজন এখানে ডিউটি দিচ্ছেন। ট্রেন আসা দেখলেই তারা লাল ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার সংকেত দেয়। চালক সংকেত পেয়ে এ ব্রিজ থেকে অদূরে ট্রেন থামিয়ে দেন। এরপর গতি কমিয়ে ট্রেন ব্রিজটি পার হয়। এতে চলাচলকারী প্রায় ট্রেনের সময় বেশি লাগছে। সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।
তিনি আরো জানান, এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিটি ট্রেন ঘণ্টায় মাত্র ৫ কিলোমিটার বেগে চলে। ট্রেন উঠলেই ব্রিজ দুটি কেঁপে ওঠে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এ দুটি ব্রিজের বয়স প্রায় ১০০ বছর পাড় হয়েছে। ব্রিজ দুটি বদলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া উল্লাপাড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার এ অংশের রেলপথ চলনবিলের মধ্যে হওয়ায় প্রতিবছর বন্যা মৌসুমে পানির তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের ধাক্কায় দুই ব্রিজে গার্ডার দুর্বল হয়ে কোথাও কোথাও ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ রেলপথে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ প্রায় ১৪টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও ৬টি তেল, কয়লা ও মালবাহী ট্রেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে।
এ বিষয়ে পাকশী রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় রেলপথ ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান উল্লাহ ভূইঁয়া ক্ষতিগ্রস্ত রেল সেতু দুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা নিশ্চিত করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের বন্যার পানির তীব্র স্রোত ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে ব্রিজ দুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেতু দুটির নিচে গভীর পানি। বর্ষা শেষ হলেও এখনো সেখানে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া এ রেলপথটি রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ। তাই এ পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আপাতত ব্রিজের নিচে অস্থায়ীভাবে লোহার অ্যাঙ্গেল, কাঠের স্লিপারের ঠেকনা দিয়ে সিসি ক্লিক নির্মাণ করা হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ওই ব্রিজের পাশে বিকল্প ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজ দুটি নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য কিছু দিন সময় লাগবে।


 
												                                            





 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										 
										