December 1, 2025, 10:59 pm

নুসরাত হত্যা: অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির ফাঁসি

Reporter Name 142 View
Update : Thursday, October 24, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯:
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ আসামিকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদের আদালত বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরয়ে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসাটির গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

আজ বহুল প্রত্যাশিত এই রায় ঘোষণার পর গোটা দেশের মানুষের আরও একবার আদালতের প্রতি চাওয়া পূরণ হলো।

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষার্থী নুসরাতকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষা চলাকালে মাদরাসা ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গুরুত্বর দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় সবার চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নুসরাত।

সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসা মানিকের মেয়ে নুসরাত তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।

পরিবারের অভিযোগ, সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে।

এরপরই মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নুসরাত ও তার পরিচারের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে লম্পট সিরাজের লোকেরা। ক্রমেই পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় প্রতিদিন নুসরাতকে পরীক্ষা হলে দিয়ে আসতো তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এক পর্যায়ে মামলা তুলে নিতে নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরই নুসরাতকে মাদরাসা ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষণ্ডরা।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশে সব মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা দেশ। এরইমধ্যে ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এর পরই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌল্লাসহ এক এক করে ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরই ধারবাহিকতায় ১৬ জনকে আসামি করে ২৯ মে আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

৩০ মে মামলাটি স্থানান্তর হয় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুরু হয় শুনানি। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করেন বিচারিক আদালত।

এর পর ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। মোট ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করলো আদালত।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর