September 14, 2025, 6:01 am

নদীর গর্ভে ‘চরের বাতিঘর’

Reporter Name 137 View
Update : Friday, July 24, 2020

অনলাইন ডেস্ক:
মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা। সরকারের নানা পদক্ষেপে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল এই চর ইউনিয়নের মানুষের যাপিত জীবনে। এই চরে বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, পাকা সড়ক সব ধরনের অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। ছড়াচ্ছিল শিক্ষার আলোও। কিন্তু গত কয়েক বছরে ‘কীর্তিনাশা’র ভাঙন সব কেড়ে নিচ্ছে বন্দরখোলাবাসীর। এবার পদ্মার গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে ‘চরের বাতিঘর’ খ্যাত বন্দরখোলার মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এস ই এস ডি পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরের দিকে হেলে পড়ে প্রায় পুরো ভাবনই তলিয়ে গেছে। সাথে সাথে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে ছুটে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষেরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। বন্দোরখোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টির কারণে শিবচর উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের মমিন উদ্দিন হাওলাদারকান্দি, জব্বার আলী মুন্সীকান্দি, বজলু মোড়লের কান্দি, মিয়া আজম বেপারীর কান্দি, রহমত হাজীর কান্দি, জয়েন উদ্দিন শেখ কান্দি, মসত খাঁর কান্দিসহ প্রায় ২৪টি গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। বিদ্যালয়টি ছিল চরাঞ্চলের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন তিনতলা ভবনসহ আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ একটি উচ্চ বিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চরের এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সবাই চরের বাসিন্দা। মূল ভূ-খণ্ড এখান থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চরের ছেলে-মেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেতো না। এই বিদ্যালয়টি হওয়ার পর থেকে চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪টি গ্রাম থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে এসে লেখাপড়া করতো।

স্থানীয়রা জানায়, পদ্মার নিকটবর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যার পানিতে ডুবে যেতো বিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকা। গত বছর পদ্মানদী ভাঙতে ভাঙতে পেছন দিক দিয়ে বিদ্যালয়টির কাছে চলে আসে। এরপর গত বছরই ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকিয়ে রাখে। চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং চালানো হয়। তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচণ্ড স্রোতের কারণে জিও ব্যাগ ফেলে তেমন সুবিধা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বুধবার রাতে তিন তলা ভবনের বিদ্যালয়টির কিছু অংশ হেলে পড়ে।

এ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল বলে, বিদ্যালয়টি নদীতে তলিয়ে গেলে এলাকায় হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। কিন্তু এটির মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না কি-না, বলা যায় না। এই বিদ্যালয়টির পাশাপাশি কাজির সুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই পাকা ভবন। এ দুটিই আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েদের প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু পদ্মা আমাদের আলোর প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিচ্ছে।

বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. ইসমাইল বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বিকট শব্দ হতে থাকে স্কুল ভবনের মধ্য থেকে। খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ ট্রলারে করে বিদ্যালয়টি দেখতে আসে। আমাদের সামনেই বিদ্যালয়টির মাঝখানে ফাটল ধরে এবং এটি পেছন দিকে হেলে পড়ে। বিদ্যালয়টিতে ভাঙন ধরলে এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। চোখের সামনে এভাবে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দেখে স্থানীয়রা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এবং করোনার প্রভাবমুক্ত হলে চরে অস্থায়ীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া হবে।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর