July 31, 2025, 2:38 am

সৌদি আরবে দুই দশকের সর্বোচ্চে বেকারত্ব

Reporter Name 158 View
Update : Sunday, October 4, 2020

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনার আঘাত ও তেলের দরপতনে সৃষ্ট বিপর্যয় মিলে সৌদি আরবে বেকারত্ব হার দুই দশকের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে। একইসঙ্গে আগের এক বছর থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। দেশটির পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত তথ্যে গত বুধবার জানা যায়, তেল খাত বার্ষিক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। অন্যদিকে তেলবহির্ভূত খাতের অধোগতি ঘটেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেশটির কর্মসংস্থান সৃষ্টির মূল চালক তেলবহির্ভূত ব্যক্তি খাতের সংকোচন ঘটেছে ১০ শতাংশেরও বেশি। শ্রমসংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন সময় পর্বে দেশটির নাগরিকদের বেকারত্ব হার ১৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ।

সরকার বাস্তবায়িত প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে অনেক সৌদি কর্মীর ৬০ শতাংশ বেতন প্রদান করা সত্ত্বেও দেশটিতে বেকারত্ব হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ তেল রফতানিকারক দেশটি চলতি বছর দ্বৈত সংকটের মুখোমুখি হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে।

একদিকে চলমান মহামারির বিরূপ প্রভাব, অন্যদিকে জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস এবং অপরিশোধিত তেলের দরপতন মিলে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কঠিন করে তুলতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছর দেশটির উৎপাদন ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমবে। একই সঙ্গে ২০২১ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে সৌদি অর্থনীতির সবচেয়ে পর্যুদস্ত ক্ষেত্রগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত মার্চ থেকে বাস্তবায়িত কয়েক দফার কারফিউর কারণে, যা মে মাসের শেষের দিকে তুলে নেয়া হয়। পাইকারি, খুচরা, হোটেল, রেস্তোরাঁসংক্রান্ত খাতটি ১৮ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে।

অন্যদিকে অর্থ, বীমা ও ব্যবসায়িক সেবা অবদমিত হয়েছে কেবল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। করোনা প্রতিরোধের রুদ্ধাবস্থা শিথিল করার পরও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা হতাশাজনক রয়ে গেছে। কম তেল রাজস্বের কারণে সরকারি ব্যয় লক্ষণীয় মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা অনুমান করছেন, লকডাউন শেষে ভোক্তা কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হলেও তা হবে ক্ষণস্থায়ী। কারণ রাজস্ব বাড়াতে গৃহীত মূল্য সংযোজন কর তিন গুণ বৃদ্ধির মতো কৃচ্ছ্রতা পদক্ষেপের কারণে দেশটির নাগরিকদের পারিবারিক বাজেট চাপে রয়েছে।

বেকারত্ব হারের ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় থাকলে এটি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের বিপত্তির কারণ হবে, যার অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিকল্পনা দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যক্তি খাতে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা জোগায়।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির মোট বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০-২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব হার ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। বিপরীতক্রমে, পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি বেড়ে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ৩১ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মূলত দেশটিতে সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে নারীদের চাকরি অন্বেষণের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। ফলে পুরুষদের অংশগ্রহণ সামান্য কমা সত্ত্বেও সার্বিক শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বেড়েছে।

দেশটির জনমিতিক বিন্যাসে তরুণ জনগোষ্ঠীর আধিক্যের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন চাকরি প্রয়োজন। বৈশ্বিক ঋণমান সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গত সপ্তাহের এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সংখ্যাটি এত বড় যে একা রাষ্ট্রীয় খাতের কর্মসংস্থান এবং তেল রাজস্বের মাধ্যমে সবার কর্মের সংস্থান সম্ভব নয়।’

তবে ঋণমান সংস্থাটি সৌদি আরবের সার্বভৌম আর্থিক সম্পদ মানের চিত্র এখনো স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিতিসহ তুলনামূলক শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি রয়েছে। এটা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর