July 30, 2025, 10:18 pm

অসময়ের আমে সুসময়

Reporter Name 121 View
Update : Friday, January 22, 2021

চাষাবাদ শুরু করেছিলেন পরীক্ষামূলকভাবে। তাতেই সাফল্য ধরা দিয়েছে। সাফল্যের মুখ দেখা এই মানুষটির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামে।

উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মহেশপুরে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বারোমাসি বারি-১১ আম চাষ শুরু করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। নিজেও লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ১০-১৫ জনের কর্মও জুটিয়েছেন তিনি।

এখন সিরাজুল ইসলামের বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে আম, সঙ্গে মুকুলের সমারোহ। পরীক্ষামূলকভাবে ১২০টি কাটিমন ও ৪০টি আশ্বিনা গাছে আম চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন।

কথা হয় উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বারোমাসি আম চাষের ধারণাটা তার ১৫ বছর আগের। নিজের কাছেই প্রশ্ন ছিল, মানুষ ১২ মাসই আম খেতে পায় না কেন? এ ধারণা থেকেই ওই সময়ই একটি জাত সংগ্রহ করে বোয়ালিয়া এলাকায় এক বিঘা জমিতে বাগান তৈরি করেন। কিন্তু আম পাকার পর খেতে গিয়ে দেখা গেল খাওয়া যাচ্ছে না। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে বড় ভাই কমান্ডার রেজাউল করিমের পরামর্শে আরেকটি বাগান তৈরি এবং সেখানে একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন। সেই প্রজেক্টে পরীক্ষামূলকভাবে আম উৎপাদনে সফলতা পান। ভালো মুনাফাও হয়। এরপর পার্বতীপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বারি-১১ জাতের আম চাষ শুরু করেন। তিনি জানান, ১২ বছরের জন্য ১২ বিঘার লিজ বাবদ তাকে ব্যয় করতে হবে ৩০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুন মাসে ওই বাগানে আম্রপালি থেকে দেড় হাজার গাছের সাইনিং করে বারি-১১ আমের উৎপাদন শুরু করেন।

পরিচর্যার বিষয়ে সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য, বিভিন্ন বই পড়ে এবং নিজের মেধা খাটিয়ে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গাছের পরিচর্যা করে ভালো মানের গাছ তৈরি করছেন। তিনি বলেন, রাসায়নিক ও জৈব সার ব্যবহারে খরচ অনেক বেশি, তাই গাছের ফলন আসার আগমুহূর্তে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট ও কিছু পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। হপার ও উইপোকার আক্রমণ থেকে রক্ষায় যথাসময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। তার কথায়, সঠিক সময় গাছ তার খাদ্য পেলে ভালো ফলন দেবেই।

বারি-১১ আম সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি গাছে ৬০ থেকে ৬৫টি আম ধরে। একটি আমের ওজন ৩৫০-৭৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। মাঝারি মিষ্টি এবং হালকা আঁশযুক্ত সুস্বাদু। অনলাইনের মাধ্যমে ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে আম বিক্রি করে থাকেন তিনি।

বারি-১১ বাগানে দেড় বছরে সিরাজুল ইসলামের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা। আর ওই সময়ে তিনি আম বিক্রি করতে পেরেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকার। তার এই আমবাগানটি আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

বাগানশ্রমিক সমুর জানান, এই বাগানে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে। মজুরি হিসেবে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দেয়া হয়। তিনি জানান, এই বাগান তৈরির ফলে আশপাশের খেটে খাওয়া কিছু মানুষের জীবিকার সন্ধান হয়েছে।

সিরাজুল ইসলামের বারি-১১ আমবাগান সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে এটি পরিদর্শন করেন তিনি। বাগান পরিচর্যার বিষয়ে অনেক রকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাকে।

এই উপজেলার মধ্যে সিরাজুল ইসলামের এত বড় বারোমাসি আমবাগান দেখে তিনি মুগ্ধ বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে প্রয়োজনীয় যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা সম্ভব তা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর