September 13, 2025, 8:07 am

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট: অবৈধ স্পিডবোটের বৈধ ইজারা!

Reporter Name 148 View
Update : Thursday, May 6, 2021

বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে পদ্মাবক্ষে সাড়ে ৪০০ স্পিডবোট চলাচল করে থাকে। দক্ষিনবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত এ নৌরুটে স্পিডবোট চলাচল করে আসছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। এ সব স্পিডবোটের অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই। চালকদের কারও নেই লাইসেন্স। আবার অদক্ষ সব চালকরাই হাল ধরেন স্পিডবোটের। ঘাট চালুর প্রথম থেকেই এ নৌরুটে অবৈধ ভাবে এ স্পিডবোট চলাচল শুরু। এ যাবত অবৈধ ভাবেই চলে আসছে অধিকাংশ স্পিডবোট। অথচ দেশের দক্ষিনবঙ্গের ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এ নৌরুটে অবৈধ স্পিডবোট চলাচল করছে বৈধ ইজারায়। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে স্পিডবোট ঘাট প্রতিষ্ঠার শুরুতেই জেলা পরিষদ ইজারা দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় বিআইডব্লিউটিএ’র। ওই বিরোধের জের ধরে জেলা পরিষদ থেকে হাত বদল হয়ে বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকরাম আলী জানান, সৃষ্টিলগ্ন থেকে স্পিডবোট ঘাট ইজারা দিয়ে আসছিল জেলা পরিষদ। সর্বশেষ ২০১২-১৩ অর্থ-বছরে জেলা পরিষদ এ ঘাটের ইজারা দেয়। ওই অর্থ-বছরে ৪ কোটি টাকায় ঘাট ইজারা নিয়েছিলেন সিরাজ মেম্বার। এরপর তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাত ধরে জেলা পরিষদ থেকে ঘাট ইজারার দায়িত্ব পায় বিআইডব্লিউটিএ।

জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, অন্তত ১০ বছর এ নৌরুটে স্পিডবোট ঘাটের ইজারা দিয়েছে জেলা পরিষদ। তিনি আরও বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ইজারা দিলে প্রতি বছর জেলা পরিষদের ফান্ডে এক কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো বছরই বিআইডব্লিউটিএ সেই টাকা জেলা পরিষদকে দেয়নি।

এদিকে, জেলা পরিষদের কাছ থেকে হাত বদল হয়ে ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে বিআইডব্লিউটিএ স্পিডবোটঘাটের ইজারা দেওয়া শুরু করে। ওই অর্থ-বছরে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকায় ঘাটের ইজারা নেয় হামিদুল ইসলাম। চলতি অর্থ-বছরে শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটের ইজারাদার হচ্ছেন জেলার লৌহজং উপজেলার মেদেনীমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খানের ভাই শাহ-আলম। তিনি বিআইডব্লিউটিএ থেকে ১ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় ঘাট ইজারা নিয়েছেন। আগের বার তথা ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খান নিজ নামেই এ ঘাট ইজারা নিয়েছিলেন। তিনি ৪ কোটি টাকায় ইজারা নেন।
বৈধ ইজারায় অবৈধ স্পিডবোট চলাচল প্রসঙ্গে মেদেনীমন্ডল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘাটের ইজারাদারের কাজ হচ্ছে স্পিডবোটের সিরিয়াল দেওয়া। যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট কাটা। কোনো স্পিডবোটের নিবন্ধন রয়েছে কিনা-তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। চালকদের লাইসেন্স রয়েছে না নেই কিংবা অদক্ষ চালকের বিষয়ে দেখার কাজ আমাদের নয়। স্পিডবোটের নিববন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স রয়েছে কিনা-তা দেখার দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়াঘাটের বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ নৌরুটে চলাচলরত স্পিডবোট গুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশের নিবন্ধন রয়েছে।

তিনি জানান, স্পিডবোটের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কাজ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরই করে থাকে। বোট চালকদের কারও লাইসেন্স নেই। তবে তাদের যোগ্যতা সদন দেওয়া হয়। যেমন- যিনি সুকানী তাকে সুকানীর, যিনি মাস্টার তাকে মাষ্টারের সনদ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে স্পিডবোটের নিবনন্ধনের কোনো সুর্নিদিষ্ট তালিকা বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে নেই।

বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়াঘাটের এ বন্দর কর্মকর্তা বলেন, পূর্বে এ ঘাট ইজারা দেওয়া হতো জেলা পরিষদ থেকে। ২০১৪-১৫ অর্থ-বছর থেকে ঘাট ইজারা প্রদানের দায়িত্ব পায় বিআইডব্লিউটিএ। সর্বশেষ ১ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় ঘাটের ইজারা পায় শাহ-আলম। স্পিডবোট চলাচলের ক্ষেত্রে তদারকির দায়িত্ব হচ্ছে নৌ-পুলিশের। স্পিডবোটে যাত্রীদের পরনে লাইফ জ্যাকেট রয়েছে কিনা কিংবা অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে কিনা-তা নিয়ন্ত্রন করবে নৌ-পুলিশ। আবার বৈরী আবহাওয়ায় স্পিডবোট চলাচলের নিয়ন্ত্রনে নৌ-পুলিশ কাজ করবে।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর