August 11, 2025, 3:23 pm

দেশে চলছে ‘কঠোরতম লকডাউনের’ প্রথম দিন

Reporter Name 154 View
Update : Friday, July 23, 2021

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে পবিত্র ঈদুল আজহা শেষে আজ শুক্রবার থেকে ফের শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর ‘কঠোরতম লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধ আগের যেকোনো বারের চেয়ে কঠোর হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে। যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।

২৩ জুলাই (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় দুই সপ্তাহের ‘কঠোর বিধি-নিষেধ’ (লকডাউন)। এ লকডাউন বহাল থাকবে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অফিস-আদালত, গার্মেন্টস-কলকারখানা ও রফতানিমুখী সব কিছুই বন্ধ থাকবে। এটা এ যাবতকালের সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ হতে যাচ্ছে। এ সময় মানুষের বাইরে আসার প্রয়োজনই হবে না। কারণ অফিসে যাওয়ার বিষয় নেই। যারা গ্রামে গেছেন, তারা জানেন যে অফিস বন্ধ। তাদের ৫ তারিখের পরে আসতে হবে।’

এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিধিনিষেধের মধ্যে ফেরিতে যাত্রীবাহী সকল ধরনের যান পরিবহন বন্ধ থাকবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র জরুরি পণ্যবাহী যান ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে।

অবশ্য এই কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে কোরবানির পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খাদ্যপণ্য এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পণ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এর আগে ঈদুল আজহার সময় মানুষের চলাচল ও পশুর হাটে কেনাবেচার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করেছিল সরকার।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ঈদের আগেই গত ১৩ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে ২৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাগুলো-

১. ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।

৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি বন্ধ থাকবে।

৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮ ব্যাংকিং/বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চ্যুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।

১০. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোডিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাস/জ্বালানি,ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশাকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১৩. বন্দরসমুহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।

১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট/প্রমাণ প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

১৯. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি কার্যক্রম নেওয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর