August 6, 2025, 8:58 pm

মিয়ানমারে সংঘর্ষ, বাংলাদেশ সীমান্তে তোলপাড়

Reporter Name 168 View
Update : Wednesday, February 7, 2024

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সেনাশাসকদের সংঘর্ষ আরও বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার থেকে অনবরত গুলি ও মর্টারশেলের তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ দিনদিন বাড়ায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।

কয়েকদিন থেকে একের পর এক গোলা এসে পড়ছে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তের ভেতরে। তাতে দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। সীমান্তের কয়েকশ পরিবারকে বাড়ি থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।

ওপারে সংঘাতে আহত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের আড়াই শতাধিক নাগরিক। তাদের মধ্যে শতাধিক সীমান্ত রক্ষীসহ দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই পরিস্থিতির সমাধানে জাতিসংঘের দ্বারস্ত হওয়ার কথাও বলেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা। বিশাল এই শরণার্থীর ভার বহন করার মধ্যে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সচেষ্ট থাকার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী- বিজিবি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় থেমে থেমেই শোনা যাচ্ছে গোলাগুলির শব্দ। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, মর্টারের গোলা প্রায়ই এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসত ঘরে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সীমান্তের অন্তত ৩টি বসত ঘরে মর্টার শেল এবং ৭টি ঘরে গুলি এসে আঘাত হানে।

মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সারাদিনে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে আহত হয়েছেন ৫ বাংলাদেশি। এর মধ্যে ঘুমধুম সীমান্তে একজন, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পালংখালী ইউনিয়নের নলবনিয়া এলাকার আয়ুবুল ইসলাম, রহমতেরবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন, পুটিবনিয়া এলাকার মোবারক হোসেন ও মো. কালু আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এর আগে তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া থেকে আশ্রয়কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ওপার থেকে আসা গুলিতে আহত হন মো. সৈয়দ আলম নামের একজন।

সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসা বুলেট ও বোমার অংশে তাৎক্ষণিকভাবে হাত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অবিস্ফোরিত বুলেট ও বোমা বিস্ফোরণ হয়ে হতাহত হতে পারেন। তাই সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে।

তার সঙ্গে থাকা বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সঙ্গে পুলিশও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বান্দরবানের ঘুমধুম এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা ২৪০টি পরিবারের মধ্যে ১৮০টি নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৫০ পরিবার নিজ উদ্যোগে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আর জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজারে ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সংঘাতের জেরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজছেন অনেকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পালিয়ে আসা মোট ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৬৪ জনের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), সেনাসদস্যসহ রয়েছে।

পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের মধ্যে আহত ৯ জনকে বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার দমদমিয়া নাফনদী জিরো লাইন দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় একটি নৌকাকে ঠেকিয়েছেন বিজিবির সদস্যরা। ওই নৌকায় ৬৫ রোহিঙ্গা ছিলেন। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর