আমদানির পরেও যশোরের বাজারে ডিমের দাম চড়া

ভারত থেকে আমদানির পরেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। যশোরের বাজারে ডিমের দাম কমেনি। বছর জুড়ে অস্থিতিশীল ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি যশোরের বাজারে। মঙ্গলবার বেনাপোলসহ আশেপাশের বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা।
ডিমের আমদানি শুল্কহার কমিয়ে আনলেও বাজারে ডিমের দামে তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না। সরকার পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীদের প্রতি পিচ ডিমের মূল্য ১১ দশমিক ০১ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তারা বিক্রি করছেন ১২ দশমিক ৮০টাকা। সরকার খুচরা বাজারে প্রতিপিচ ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছেন ১১দশমিক ৮৬ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা প্রতি পিস।
গত বুধবার (১৬ অক্টাবর) পর্যন্ত আমদানিকৃত ডিমে শুল্কহার দিতে হচ্ছিল ৩১ শতাংশ। ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আমদানিকৃত ডিমে শুল্কহার কমিয়ে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে দিতে হচ্ছে মোট ১৩ শতাংশ।
আগে প্রতিপিস ডিমে শুল্ক দিতে হত ১টাকা ৮৩ পয়সা আর বর্তমান দিতে হচ্ছে মাত্র ৭৭ পয়সা। ভারত থেকে প্রতি পিস ডিম কেনা হচ্ছে ৫ টাকা ৮০ পয়সা। শুল্কহার ৭৭ পয়সা এবং অন্যান্য খরচ ও লভ্যাংশ ১ টাকা ধরলেও প্রতিপিস ডিমের খরচ পড়ছে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা। কিন্তু বর্তমান খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি আছে প্রতি পিচ ১৩ থেকে১৪ টাকা।
বেনাপোল বাজারের ডিম ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যেভাবে ডিম কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি। সরকার ইতিমধ্যেই ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন পাইকারি বাজারে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা বাজারে আমাদেরকে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছেন ১১ টাকা ৮৬ পয়সা। কিন্তু আমরা ডিম কিনছি ১২ টাকা ৮০ পয়সা। সেখানে আমরা বর্তমান ১৪ টাকায় বিক্রি করছি।
আমদানিকৃত ডিমের ব্যাপারে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, বেনাপোল বাজারে আমদানিকৃত কোন ডিম আমরা পাই না। আমরা যেভাবে ডিম কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি ।
অপর ডিম ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ফার্মের মালিকরা যদি সরকারের নির্ধারণ করা রেটে ডিম আমাদেরকে দেয় আমরাও সরকারের নির্ধারিত রেটে ডিম বিক্রি করতে পারব। এক সপ্তাহ আগে আমরা প্রতি পিচ ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি করেছি। বর্তমান এক টাকা কমিয়ে ১৪ টাকা বিক্রি করছি।আসলে আমরা যেভাবে কিনছি তার উপর কিছু লাভ ধরে সেভাবেই বিক্রি করছি। এর কারণে প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের সাথে আমাদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। প্রশাসন আমাদের উপর নজরদারি না করে যদি ফার্মে ফার্মে অভিযান চালিয়ে ভাউচার চেক এবং তদারকির ব্যবস্থা করে তাহলে হয়তো ফার্মের মালিকরা সরকার নির্ধারত রেটে ডিম বিক্রি করবে।
যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল, নাভারন, শার্শা ও বাগআচড়া বাজার ঘুরে কথা হয় বিভিন্ন ডিম ক্রেতার সাথে। ক্ষোভের সাথে তারা মতামত প্রকাশ করেন।
বেনাপোল বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, সরকার পতনের পর থেকে ডিমের বাজার একেবারেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডিমের দাম।সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিমের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ দিকে নজর দিতে হবে।
অপর ক্রেতা নাভারনের আসাদুর রহমান বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করে লাভ কী? খুচরা দোকানগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। সব ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাদামি রঙের ডিম ১৪ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।
বাগআচড়ার আবু সাইদ বলেন, ডিমের দোকানদাররা এখন আর বেশি ডিম দোকানে উঠাচ্ছে না। চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিম ব্যবসায়ী বলেন, সিন্ডিকেটে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চক্র দাম নির্ধারণ করে, যাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।মোবাইল ফোনে পাঠানো দরে তারা ডিম কিনতে পারে না। ব্যবসায়ীদের ডিম কিনে আনা এবং বিক্রি করার মূল্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে এ ব্যবসায়ী মনে করেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সাড়ে ৭ টাকা দরে ভারত থেকে মুরগির ডিম আমদানি করা হচ্ছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচটি চালানে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি মুরগীর ডিম আমদানি করা হয়েছে।