August 4, 2025, 8:46 pm

ঢাকা শহরে রয়্যালের নীরব প্রতিবাদ!

Reporter Name 158 View
Update : Saturday, December 15, 2018


নিউজ ডেস্ক,শনিবার,১৫ ডিসেম্বর ২০১৮:

বনানীর ১১ নম্বর, ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। রাস্তায় জ্যাম, সঙ্গে গাড়ির অতিরিক্ত হর্ন। এসব কিছুর মাঝে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক ব্যক্তি। ব্যানারে লেখা- ‘হর্ন হুদাই, বাজায় ভুদাই’, যার অর্থ ‘বোকা বা স্থূলবুদ্ধির মানুষ অকারণে হর্ন বাজায়’। ব্যানারটি দেখে রীতিমতো অবাক পথচারীরাও। এগিয়ে গিয়েই কথা হয় তার সঙ্গে, পুরো নাম মমিনুর রহমান রয়্যাল। পেশায় একজন বিজ্ঞাপনকর্মী। শহর অঞ্চলের গাড়ির অতিরিক্ত হর্নের কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণ কমাতেই তার এই নীরব প্রতিবাদ। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে পেয়েছে ব্যাপক সফলতা। তার ব্যানার পড়ে চালকরা রীতিমতোই বন্ধ করছেন অযথা হর্ন বাজানো। তা ছাড়া নানান শ্রেণিপেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছেন তার এই উদ্যোগে। কথা হয় রয়্যালের সঙ্গে। জানালেন তার উদ্যোগের গল্প

ভাবনাটা যেভাবে

প্রতিদিনের মতোই অফিসে যাচ্ছিলেন রয়্যাল। খেয়াল করলেন, অধিকাংশ গাড়িচালক অযথা কোনো কারণ ছাড়াই গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য মতে, ৬০ ডেসিবল থেকে অধিক মাত্রার শব্দ মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে দিতে পারে এবং ১০০ ডেসিবলের থেকে অধিক শব্দে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করলে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞের মতে, ঢাকা শহরের বেশ কিছু পয়েন্টে শব্দের মাত্রা ৭০ থেকে ১২০ ডেসিবল পর্যন্ত উঠানামা করে থাকে।

ব্যাপারটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হলেও এই বিষয় নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা সংগঠন ও পুলিশদের নির্দেশ শুনছেন না অনেক চালকই। ব্যাপারটি চিন্তায় আসে রয়্যালের মাথায়। চিন্তা করলেন ভিন্ন পদক্ষেপের কথা, যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও দূর হবে এই সমস্যা। যেমন চিন্তা তেমন কাজ, ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন রাস্তার পাশে।

অফিস শুরুর আগে এবং পরে

রয়্যাল বলেন, ‘শুধু কথার কথা নয়, কার্যকর কিছু করতে হলে মানুষের কথ্য ভাষা ব্যবহার করতে হবে। অকারণে শব্দ দূষণকারী মানুষকে লজ্জা দিতে হবে। আর কিছু না হোক, চক্ষুলজ্জার খাতিরে হলেও মানুষ হর্ন ব্যবহার কমিয়ে দেবে। তাই আমি এই পথটিকে উত্তম মনে করেছি’। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় এবং অফিস শেষে মমিনুর যে কোনো ব্যস্ততম রাস্তার পাশে তার ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, এ ছাড়াও তার ব্যবহূত স্লোগান দিয়ে তৈরি করেন স্টিকার, পোস্টার, ব্যানারসহ নানান টি-শার্ট। যখন যেখানেই যান ওই এলাকায় স্টিকার, পোস্টারগুলো চালকদের মাঝে বিতরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। এতে তারা নিজেরাই নিজেদের ভুল বুঝতে সক্ষম হন।

সাড়া পেলেন ব্যাপক

রয়্যালের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইতিমধ্যে ঢাকা শহরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই তাকে দেখে অযথা হর্ন বাজানো বন্ধ করে দিয়েছে। আগে অধিকাংশ চালক যখন কোনো কারণ ছাড়াই হর্ন বাজাত এখন তাদের একটি বড় অংশ রয়্যালের প্রতিবাদে অনেকটা সরে এসেছে। এ ছাড়াও পথচারী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়্যালের এই উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। গাড়িচালকরা তার নীরব প্রতিবাদ দেখে নিজ থেকেই হর্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকছে।

বর্তমানে রয়্যালের উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থাকতে অর্ধশতেরও বেশি নানান শ্রেণিপেশার মানুষ রয়্যালের ব্যানার হাতে তাদের অবসর সময়ে ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন বিনাস্বার্থে। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের প্রতিটি স্থান থেকে সবাই রয়্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ডিজাইন ব্যবহার করে নিজেরাই এরূপ ব্যানার তৈরি করে দাঁড়িয়ে পড়ছেন রাস্তার পাশে।

সমাধান না হওয়া পর্যন্ত করে যাব

প্রায় চার বছর ধরে রয়্যাল তার অবসর সময়ে এই কাজ করে আসছেন। সম্ভব হলেই ছুটে আসেন রাস্তায়। সেই চেনা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে যান তার কাজে। কতদিন পর্যন্ত এটি করে যাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রয়্যাল বলেন, ‘সহ্যসীমার চেয়ে বেশি শব্দ মানুষের নানা রকম ক্ষতি করে থাকে, যা একজন মানুষকে বধির পর্যন্ত করে দিতে পারে। এ ছাড়া এর আরও ভয়ঙ্কর প্রভাব রয়েছে। অন্য কেউ এটি মানুক না মানুক, আমি থামব না। যতদিন পর্যন্ত অযথা হর্নের শব্দ বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি আমার এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। আমি মনে করি সফলতা আসবেই। রয়্যাল আরও মনে করেন, অন্যান্য সচেতনার পাশাপাশি তার এই ভিন্নধর্মী আন্দোলনের মাধ্যমেই শহরের অপ্রয়োজনীয় হর্নের আওয়াজ বন্ধ করা সম্ভব হবে। এর জন্য যা করতে হয়, তা করতে প্রস্তুত।

যেভাবে যুক্ত হবেন

এতদিন পর্যন্ত এই কাজটি রয়্যাল একা করে এলেও তিনি চান সবার মাঝেই ছড়িয়ে যাক এই উদ্যোগ। এ জন্য দেশের সব এলাকার মানুষের সহায়তা চান রয়্যাল। এই উদ্যোগের যে কেউ তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকেই সম্পৃক্ত হতে পারেন। যে কেউ চাইলেই রয়্যালের পোস্টার, স্টিকার, ব্যানারের ডিজাইনের আসল কপি পেতে পারেন। এ জন্য রয়্যালের ‘রয়্যালের ছবি’ (www.facebook.com/royalerchhobi) নামক একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে, যেখানে যোগাযোগ করলেই ইমেইলের মাধ্যমে পাওয়া যাবে তার ডিজাইন এবং নিজেই তার এলাকার ব্যস্ততম সড়কে এই উদ্যোগ শুরু করতে পারেন। বর্তমানে হাজারেরও বেশি মানুষ রয়্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ডিজাইন নিয়ে নিজেদের এলাকায় এই উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছেন। সব মানুষের এই ভালোবাসাতেই তার উদ্যোগ সফল হবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞাপনকর্মী।

খবর: সমকাল


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর